রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর সন্ধ্যায়, স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেট সফলভাবে ২৮টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে এই উৎক্ষেপণটি সম্পন্ন হয়, যা স্টারলিঙ্ক গ্রুপের ১১-২০ মিশনের অংশ। এই মিশনটি স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্ক নক্ষত্রপুঞ্জকে আরও প্রসারিত করেছে।
এই মিশনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ফ্যালকন ৯ রকেটের প্রথম পর্যায়ের বুস্টার, বি১০৬৩, তার ২৮তম উড়ান সম্পন্ন করেছে। এটি স্পেসএক্সের পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। উৎক্ষেপণের পর, বুস্টারটি প্রশান্ত মহাসাগরে 'অফ কোর্স আই স্টিল লাভ ইউ' নামক ড্রোনশিপে সফলভাবে অবতরণ করে, যা কোম্পানির পুনঃব্যবহারযোগ্যতা এবং ব্যয়-দক্ষতার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এই বুস্টারটি পূর্বে সেন্টিনেল-৬ এবং ডার্ট মিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশযান বহন করেছে।
নতুন স্থাপিত স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটগুলি স্পেসএক্সের বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট উদ্যোগের অংশ। এই ক্রমবর্ধমান নক্ষত্রপুঞ্জটি বিশ্বজুড়ে প্রত্যন্ত এবং অনুন্নত অঞ্চলে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই উৎক্ষেপণটি ২০২৫ সালে স্পেসএক্সের ১২৪তম ফ্যালকন ৯ মিশন ছিল।
এই উৎক্ষেপণটি কেবল মহাকাশেই নয়, পৃথিবীর বুকে এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, যেমন অ্যারিজোনায়, রকেটের নিষ্কাশন ধোঁয়া সূর্যাস্তের শেষ আলোয় আলোকিত হয়ে এক 'গোধূলি প্রভাব' তৈরি করে, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এই ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অনেকেই এটিকে 'ধূমকেতুর মতো পথ' বলে বর্ণনা করেন।
স্পেসএক্সের লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যয়বহুল, অবিশ্বস্ত বা অনুপলব্ধ। এই স্টারলিঙ্ক নক্ষত্রপুঞ্জটি প্রায় ৪২,০০০ স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে উচ্চ-গতির, কম-লেটেন্সি ব্রডব্যান্ড সংযোগ সরবরাহ করবে। পরবর্তী স্টারলিঙ্ক মিশন, স্টারলিঙ্ক গ্রুপ ১১-২১, আগামী ৫ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণের জন্য নির্ধারিত রয়েছে।
এই মহাকাশ অভিযানগুলি কেবল প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের নিদর্শনই নয়, বরং বিশ্বকে আরও সংযুক্ত এবং তথ্যের সহজলভ্যতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতীক। প্রতিটি সফল উৎক্ষেপণই প্রমাণ করে যে মানবতা কীভাবে উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানগুলিতেও সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যা শিক্ষা, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।