আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি সৌর পদার্থবিদ্যার এক দীর্ঘদিনের ধাঁধার সমাধান করেছে। তাঁরা সূর্যের করোনা বা বহিঃমণ্ডলে ক্ষুদ্র আকারের টরসনাল আলফভেন তরঙ্গগুলির সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন। এই তরঙ্গগুলিই সম্ভবত সেই প্রধান শক্তি উৎস, যা সূর্যের পৃষ্ঠের তুলনায় এর বাইরের স্তরকে লক্ষ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত রাখে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি অক্টোবর ২০২৫ সালে সম্পন্ন হয় এবং এর ফলাফল বিশ্বখ্যাত সাময়িকী 'নেচার অ্যাস্ট্রোনমি'-তে প্রকাশিত হয়েছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয়েছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ড্যানিয়েল কে. ইনুই সৌর টেলিস্কোপের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। এই টেলিস্কোপের ক্রায়োজেনিক নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোপোলারমিটার (Cryo-NIRSP) যন্ত্রটি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা রহস্যময় চৌম্বকীয় তরঙ্গগুলির মোচড়ানো গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এই গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁরা করোনার মধ্যে ১.৬ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লোহা আয়নগুলির লাল ও নীল সরণের মতো সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করেন।
এই আন্তর্জাতিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রিচার্ড মরটন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে এই আবিষ্কারটি ১৯৪০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া এই তরঙ্গগুলির অনুসন্ধানের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। অধ্যাপক মরটন আরও জানান যে পূর্বে যে বৃহত্তর, বিচ্ছিন্ন আলফভেন তরঙ্গগুলি সৌর শিখার সাথে যুক্ত ছিল, তার বিপরীতে এই ক্ষুদ্র তরঙ্গগুলি অবিরাম উপস্থিত থাকে এবং সম্ভবত এগুলিই করোনার উত্তাপের মূল কারণ। এই তরঙ্গগুলি প্রসারিত রাবার ব্যান্ডের মতো, যা চৌম্বক ক্ষেত্র রেখা বরাবর শক্তি সঞ্চারিত করে।
এই গবেষণায় নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউএস ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF), পিকিং ইউনিভার্সিটি, কেইউ ল্যুভেন, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্স সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল। এই পর্যবেক্ষণ কেবল মৌলিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়, বরং পৃথিবীর প্রযুক্তির সুরক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আলফভেনিক আলোড়ন বা টার্বুলেন্স মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে, যা পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ গ্রিডকে ব্যাহত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তরঙ্গগুলির আবিষ্কার সৌর পদার্থবিদ্যার তাত্ত্বিক মডেলগুলিকে আরও দৃঢ় সমর্থন যোগাচ্ছে, যা এতদিন কেবল গণনার মাধ্যমে অনুমান করা হচ্ছিল। ড্যানিয়েল কে. ইনুই সৌর টেলিস্কোপের ৪-মিটার ব্যাসের আয়না এবং এর উন্নত যন্ত্রপাতির সক্ষমতা এই ধরনের সূক্ষ্ম মহাজাগতিক ঘটনাগুলিকে দৃশ্যমান করে তুলেছে।
