পরিবেশগত উদ্বেগের মধ্যে পৃথিবী আলোকিত করার পরীক্ষার জন্য ২০২৬ উপগ্রহ অভিযানের লাইসেন্স চাইছে রিফ্লেক্ট অরবিটাল

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক মহাকাশ উদ্ভাবক সংস্থা রিফ্লেক্ট অরবিটাল তাদের প্রাথমিক প্রযুক্তি প্রদর্শক, ইয়ারেন্ডিল-১ (EARENDIL-1), মোতায়েন করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন চেয়েছে। এই অভিযানটি ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে উৎক্ষেপণের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘনীভূত সূর্যালোক প্রতিফলিত করার মাধ্যমে কার্যকর দিনের আলোর সময়কাল বাড়ানোর সম্ভাব্যতা যাচাই করা। নবায়নযোগ্য শক্তি আহরণের ক্ষেত্রে এটি একটি অভিনব কৌশল, যার মাধ্যমে গোধূলি লগ্নে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে।

রিফ্লেক্ট অরবিটাল এই পরীক্ষাকে একটি বৃহত্তর প্রকল্পের সূচনা হিসেবে দেখছে। তাদের পরিকল্পনা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ৪,০০০-এরও বেশি উপগ্রহ নিয়ে একটি নক্ষত্রপুঞ্জ (constellation) তৈরি করা, যা সূর্য-সমলয় কক্ষপথে (sun-synchronous orbits) অবস্থান করে চাহিদা অনুযায়ী আলো সরবরাহ করবে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে মে মাসে ইউএস এয়ার ফোর্স থেকে ১.২৫ মিলিয়ন ডলারের স্মল বিজনেস ইনোভেশন রিসার্চ (SBIR) চুক্তি সহ আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিক পরীক্ষামূলক উপগ্রহ ইয়ারেন্ডিল-১-এ একটি ৬০ বাই ৬০ ফুট (১৮ বাই ১৮ মিটার) আয়না থাকবে। এই আয়না নির্দিষ্ট পরীক্ষাস্থলে চাঁদের আলোর মতো মৃদু আভা নিক্ষেপ করবে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে এই পরিষেবাটি অত্যন্ত স্থানীয় হবে, যেখানে প্রতিটি প্রতিফলন সীমিত সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাজ করবে।

সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও আলো সরবরাহ করার এই উদ্যোগটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সিলভার্যাডো হিলস অবজারভেটরির বিশেষজ্ঞ জন বেরেন্টাইন উল্লেখ করেছেন যে প্রতিফলিত আলোর রশ্মি পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে চার গুণ বেশি উজ্জ্বল হতে পারে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলীয় বিক্ষেপণের (atmospheric scattering) মাধ্যমে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের তীব্র প্রতিফলিত আলো সংবেদনশীল জ্যোতির্বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণকে ব্যাহত করতে পারে এবং নিশাচর বাস্তুতন্ত্রের প্রতিষ্ঠিত ছন্দকে বিঘ্নিত করতে পারে। প্রতিষ্ঠাতা বেন নওয়াক পূর্বে ২৫০,০০০ উপগ্রহের একটি নক্ষত্রপুঞ্জের ধারণা ভাসিয়ে দেওয়ায়, চাহিদা অনুযায়ী আলো প্রদানের এই পরিকল্পনাটি কক্ষপথের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

রিফ্লেক্ট অরবিটাল জানিয়েছে যে তারা সতর্কতার সাথে এগিয়ে যেতে চায় এবং পূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ স্কেলিং করার আগে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (Environmental Impact Assessment) সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছে। ২০২৬ সালের এই অভিযানটিকে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরিষেবা অবস্থানে পরিবেশগত সংবেদনশীলতা সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য একটি সহযোগিতামূলক সুযোগ হিসেবে দেখছেন। যদিও তাৎক্ষণিক মনোযোগ এই প্রদর্শনের দিকে, দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে জরুরি আলো সরবরাহ করা বা শহুরে আলোর প্রতিস্থাপন করা। চলমান লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী প্রদর্শন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং পরিবেশগত তত্ত্বাবধানের মধ্যেকার সম্পর্ক মূল্যায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে কাজ করবে।

উৎসসমূহ

  • Space.com

  • Communications Daily

  • Gadgets 360

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

পরিবেশগত উদ্বেগের মধ্যে পৃথিবী আলোকিত করার... | Gaya One