২০২৫ সালের ২২শে অক্টোবর নাগাদ, চন্দ্র খনিজ শিল্প এক নতুন দিগন্তের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে সরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান উদ্যোগ এবং বেসরকারি পুঁজির এক অভূতপূর্ব মিলন ঘটেছে। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে, মহাকাশীয় সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল মহাকাশ স্টার্টআপগুলিতে বিপুল পরিমাণে অর্থ ঢালছে। পৃথিবীর প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ সংস্থাগুলিও এই উদীয়মান ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পিছিয়ে নেই। রিও টিন্টো, বিএইচপি, এবং গ্লেনকোরের মতো সংস্থাগুলি এখন মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে এবং স্বয়ংক্রিয় খনন ব্যবস্থার উপর গবেষণা চালাচ্ছে, কারণ তাদের বিশাল মাপের উত্তোলন অভিজ্ঞতা চন্দ্র সম্পদের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হতে চলেছে।
নাসার আর্টেমিস কর্মসূচি চাঁদে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে, আর্টেমিস II মিশনটি ২০২৬ সালের এপ্রিলে মহাকাশচারী সহ ওরিয়ন মহাকাশযান নিয়ে প্রথম মনুষ্যবাহী উড়ান সম্পন্ন করতে প্রস্তুত। এই অভিযানগুলির মূল লক্ষ্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরু, যা জলীয় বরফ এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। নাসার বিজ্ঞানী জেরাল্ড স্যান্ডার্স পূর্বে উল্লেখ করেছেন যে এই সম্পদগুলিতে প্রবেশাধিকার বাণিজ্যিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে, খরচ কমাতে এবং একটি বৃত্তাকার চন্দ্র অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রযুক্তি প্রদর্শনের জন্য কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস (CLPS) উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস এবং ইন্টুইটিভ মেশিনসের মতো সংস্থাগুলির মিশন ২০২৫ সালের শুরুর দিকে নাসার পেলোড বহন করে উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা। এই পেলোডগুলির মধ্যে রয়েছে PRIME-1, যা ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন (ISRU) প্রযুক্তি পরীক্ষা করার জন্য নকশা করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে, চন্দ্র খনন বাজার ২০৩৫ সালের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল রকেট জ্বালানির জন্য জলীয় বরফ এবং বিরল খনিজ উত্তোলন। মর্গ্যান স্ট্যানলি অনুমান করেছে যে শুধুমাত্র চন্দ্র জল নিষ্কাশন বাজার ২০৪০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তবে, পৃথিবীর বাইরে জল পরিবহনের উচ্চ ব্যয় এবং জটিলতার কারণে, স্থানীয়ভাবে জল পুনর্ব্যবহারের প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, যা ২০৩৩ সালের মধ্যে এই সংক্রান্ত বাজারকে প্রায় ৫.৮৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারে। এই উদীয়মান অর্থনীতির বিভিন্ন অংশীদারদের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত মহাকাশ রোবোটিক্স এবং লজিস্টিক্সে ঐতিহ্যবাহী খনি সংস্থাগুলির বিনিয়োগের উপর নজর রাখা। মহাকাশ সংস্থার প্রধানদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা যেন প্রয়োজনীয় দক্ষতা সমন্বয়ের জন্য খনি কর্পোরেশনগুলির সাথে সহযোগিতা স্থাপন করেন। অন্যদিকে, খনি নির্বাহীদের মহাকাশ লজিস্টিক সরবরাহকারীদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা উচিত।
এই পরিস্থিতিতে, নীতি নির্ধারকদের সম্পত্তি অধিকার এবং সম্পদ মালিকানার জন্য স্পষ্ট কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যারা এই মুহূর্তে সঠিক কৌশল অবলম্বন করবেন, তারাই এই চন্দ্র অর্থনীতির নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করা যায়। এই সম্পদ আহরণের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রযুক্তি পৃথিবীর খনন শিল্পেও বিপ্লব আনতে পারে, যা আরও বেশি কার্যকর, টেকসই এবং নিরাপদ উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে আসবে।
