আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA)-র যুগান্তকারী X-59 কিউয়িটি সুপারসনিক গবেষণা বিমান তার প্রথম উড়ানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই অত্যাধুনিক বিমানটি সুপারসনিক গতিতে উড়ানের সময় প্রচলিত শব্দের চেয়ে অনেক কম শব্দ উৎপন্ন করে, যা ভবিষ্যতে বিমান পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। নাসা-র Quesst মিশনের অংশ হিসেবে এই বিমানটি তৈরি করা হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সুপারসনিক বিমান চালনার ক্ষেত্রে শব্দদূষণ কমানো।
সম্প্রতি, ১০ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়ার পালমডেলের ইউ.এস. এয়ার ফোর্স প্ল্যান্ট ৪২-এ X-59 বিমানটি তার প্রথম লো-স্পিড ট্যাক্সি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিমানের স্টিয়ারিং এবং ব্রেকিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমগুলির কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে, যা বিমানটিকে প্রথম উড়ানের আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এরপর ১৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে বিমানটি নিজস্ব শক্তিতে চালিত হয়ে ট্যাক্সি পরীক্ষা সম্পন্ন করে, যা ছিল এর ইতিহাসে প্রথমবার। এই পর্যায়ে প্রকৌশলীরা বিমানের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২৫ জুলাই, ২০২৫ তারিখে একটি F-15B বিমানের সহায়তায় X-59 বিমানের গ্রাউন্ড ইন্সট্রুমেন্টগুলির পরীক্ষা করা হয়। এই ধারাবাহিক গ্রাউন্ড পরীক্ষাগুলি বিমানটির প্রথম উড়ানের জন্য একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ X-59 তার প্রথম উড়ান সম্পন্ন করবে। এই প্রাথমিক উড়ানটি বিমানের এয়ারওয়ার্থিনেস এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একাধিক পরীক্ষার একটি সিরিজের সূচনা করবে। বিমানটি পালমডেল থেকে উড়ে নাসার আর্মস্ট্রং ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টারে অবতরণ করবে।
Quesst মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো সুপারসনিক বিমান চালনা এমনভাবে করা যাতে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টিকারী সুপারসনিক শব্দ (sonic boom) তৈরি না হয়। X-59 বিমানটি ৫৫,০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম এবং এটি প্রায় ৭৫ ডেসিবল (EPNdB) শব্দ উৎপন্ন করবে, যা একটি সাধারণ সুপারসনিক শব্দের তুলনায় অনেক কম। এই কম শব্দ জনমনে সুপারসনিক পরিবহনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
X-59 বিমানটির নকশা বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এর লম্বা, সরু কাঠামো এবং দীর্ঘায়িত নাক শকওয়েভ (shockwave) তৈরি হওয়া কমাতে সাহায্য করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ককপিটে কোনো ঐতিহ্যবাহী সামনের দিকের জানালা নেই; পাইলটরা বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য এক্সটার্নাল ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত উচ্চ-রেজোলিউশন স্ক্রিনের উপর নির্ভর করবেন। বিমানটিতে জেনারেল ইলেকট্রিক F414-GE-100 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ২২,০০০ পাউন্ড থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম।
ভবিষ্যতে, নাসা ২০২৫ সাল থেকে আমেরিকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর দিয়ে X-59 বিমানটি উড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। এই উড়ানগুলির উদ্দেশ্য হলো সুপারসনিক গতিতে উৎপন্ন শব্দ সম্পর্কে জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করা। এই মূল্যবান তথ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সাথে ভাগ করে নেওয়া হবে, যা সুপারসনিক বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্য বিদ্যমান শব্দ বিধিমালা সংশোধনে সহায়তা করবে। X-59 এর উন্নয়ন এবং আসন্ন উড়ান পরীক্ষাগুলি শান্ত সুপারসনিক বিমান পরিবহনের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।