মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনায় 'থ্রি-বডি প্রবলেম' বা তিন বস্তুর সমস্যা একটি জটিল বিষয় যা দীর্ঘদিন ধরে প্রকৌশলীদের ভাবিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি, বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকরা একটি নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছেন, যেখানে গ্রহের চাঁদগুলোকে মহাকর্ষীয় সহায়তার জন্য ব্যবহার করে আরও স্থিতিশীল কক্ষপথে পৌঁছানো সম্ভব। এই কৌশলটি মহাকাশযানের জ্বালানি খরচ এবং মিশনের সামগ্রিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
ঐতিহ্যগতভাবে, মহাকাশযানগুলো তাদের গতিপথ পরিবর্তনের জন্য গ্রহগুলোর মহাকর্ষীয় সাহায্য নিত। কিন্তু গ্রহের চাঁদগুলোকে এই কাজে ব্যবহার করার ধারণাটি তুলনামূলকভাবে নতুন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, চাঁদগুলো, বিশেষ করে দুর্বল স্থিতিশীলতা সীমানায় (Weak Stability Boundaries - WSBs) থাকা চাঁদগুলো, মহাকর্ষীয় সহায়তার জন্য অতিরিক্ত সুযোগ তৈরি করতে পারে। এর ফলে স্থিতিশীল কক্ষপথের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (JUICE) মিশন এই পদ্ধতির একটি চমৎকার উদাহরণ। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে, JUICE বৃহস্পতির দিকে তার যাত্রাপথে চাঁদ এবং পৃথিবীর দ্বৈত মহাকর্ষীয় সাহায্য ব্যবহার করে তার গতিপথ পরিবর্তন করেছিল। আট বছরের এই দীর্ঘ যাত্রায় বৃহস্পতির চাঁদগুলো, যেমন ক্যালিস্টো, ইউরোপা এবং গ্যানিমেড, অধ্যয়নের জন্য এই কৌশলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
একইভাবে, ESA এবং জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (JAXA) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত বেপিকলম্বো (BepiColombo) মিশন বুধ গ্রহে পৌঁছানোর জন্য একাধিক মহাকর্ষীয় সাহায্য ব্যবহার করেছে। ২০১৮ সালে উৎক্ষেপিত এই মিশনটি পৃথিবী, শুক্র এবং বুধ গ্রহের একাধিক ফ্লাইবাই সম্পন্ন করেছে। সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে বুধ গ্রহের একটি ফ্লাইবাই সম্পন্ন হয়।
এই কৌশলগুলো মহাকাশযানটির গতি কমাতে সাহায্য করে, যাতে এটি ২০২৬ সালের শেষের দিকে বুধ গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে। গ্রহ এবং তাদের চাঁদগুলোর মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়াকে বিবেচনায় নিয়ে, চাঁদ-ভিত্তিক মহাকর্ষীয় সাহায্যকে মিশনের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা জ্বালানি এবং খরচ কমানোর একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কৌশল। এটি মহাকাশ পরিকল্পনাকারীদের জন্য সৌরজগৎ অনুসন্ধানের নতুন পথ খুলে দিতে পারে।