জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণায় এক যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ছয় মাস ধরে ইঁদুরের শুক্রাণু উৎপাদনকারী স্টেম সেল (spermatogonial stem cells) হিমায়িত করে রেখেছিলেন। পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পর, এই কোষগুলি ব্যবহার করে সুস্থ শাবকের জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই গবেষণাটি দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যের কার্যকারিতা এবং জননকোষ (germ cell) সংরক্ষণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
গবেষণায়, কোষগুলিকে মহাকাশে পাঠানোর আগে হিমায়িত করা হয়েছিল এবং আইএসএস-এর একটি ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, কোষগুলি গলানো হয় এবং ইন ভিট্রো (in vitro) পদ্ধতিতে সম্প্রসারিত করা হয়। এরপর এই কোষগুলি ইঁদুরের টেস্টিকলে প্রতিস্থাপন করা হয়, যার ফলে স্বাভাবিক মিলনের মাধ্যমে সুস্থ শাবকের জন্ম হয়। জন্ম নেওয়া ইঁদুর শাবকগুলির জিন প্রকাশ (gene expression) স্বাভাবিক ছিল এবং তাদের সুস্থ দেখাচ্ছিল।
এই গবেষণাটি দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ মিশনের জন্য জননকোষ সংরক্ষণের সম্ভাব্যতা বুঝতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন যে মহাকাশ বিকিরণ ক্রায়োপ্রিজারভেশনের চেয়ে স্টেম সেলগুলির উপর অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তবে, ফলাফলগুলি দেখিয়েছে যে মহাকাশে ছয় মাস থাকার পর কোষগুলির মধ্যে বিকিরণের প্রভাব খুবই নগণ্য ছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে মহাকাশে থাকার চেয়ে হিমায়িত করার প্রক্রিয়াটিই কোষগুলির উপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, ক্রায়োপ্রিজারভেশনের সময় ব্যবহৃত হাইড্রোজেন পারক্সাইড কিছু কোষের মৃত্যু ঘটালেও, মহাকাশ বিকিরণের তুলনায় হিমায়িতকরণের প্রভাব বেশি ছিল।
যদিও প্রাথমিক ফলাফলগুলি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, তবুও দীর্ঘমেয়াদী মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। গবেষকরা প্রথম প্রজন্মের শাবকগুলির জীবনকাল এবং পরবর্তী প্রজন্মের উপর স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলি নিয়ে আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন। আইএসএস-এ আরও কিছু হিমায়িত জননকোষ পরীক্ষার জন্য রাখা আছে। এই গবেষণাটি অন্যান্য সাম্প্রতিক মহাকাশ-ভিত্তিক জৈবিক গবেষণার পরিপূরক। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় আইএসএস-এ পেরিফেরাল ব্লাড মনোনুক্লিয়ার সেল (peripheral blood mononuclear cells) সফলভাবে ক্রায়োপ্রিজারভ করা হয়েছিল। এই সম্মিলিত ফলাফলগুলি মহাকাশে জৈবিক সংরক্ষণের আমাদের বোঝাপড়াকে আরও উন্নত করে।