পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৪৫ মাইল উপরে অবস্থিত মেসোস্ফিয়ার স্তরের গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এ. পলসন স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস (SEAS)-এর গবেষকরা। তারা সফলভাবে হালকা ওজনের, সৌরশক্তি চালিত যন্ত্র পরীক্ষা করেছেন যা এই স্তরে ভেসে থাকতে সক্ষম। এই যন্ত্রগুলো ফটোরিসিস (photophoresis) নামক একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায়, আলোর তাপে গ্যাসীয় অণুগুলো ভরবেগ লাভ করে এবং কম চাপের পরিবেশে উপরে ওঠার শক্তি তৈরি করে। গত ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে নেচার (Nature) জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে, যা বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
এই যন্ত্রগুলো সিরামিক অ্যালুমিনা এবং ক্রোমিয়াম স্তরের তৈরি অত্যন্ত পাতলা, সেন্টিমিটার-স্কেলের মেমব্রেন দিয়ে গঠিত। প্রায় ৫৫% প্রাকৃতিক সূর্যালোকের তীব্রতায় এই মেমব্রেনগুলো একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারে ভেসে থাকতে সক্ষম হয়, যা মেসোস্ফিয়ারের পরিবেশের অনুরূপ। এই পরীক্ষা সফল হওয়ায়, বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বাতাসের গতি, তাপমাত্রা ও চাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের জন্য এই যন্ত্রগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। এই তথ্যগুলো জলবায়ু মডেল উন্নত করতে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরও নির্ভুল করতে সহায়ক হবে।
মেসোস্ফিয়ার, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত, তা দীর্ঘকাল ধরেই গবেষণার জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। প্রচলিত পদ্ধতি, যেমন সাউন্ডিং রকেট, কেবল মাঝে মাঝে তথ্য সরবরাহ করে, যার ফলে এই বায়ুমণ্ডলীয় স্তর সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ফাঁক থেকে যায়। এই সৌরশক্তি চালিত যন্ত্রগুলো এই অঞ্চলে অবিচ্ছিন্ন এবং টেকসই পর্যবেক্ষণের একটি নতুন উপায় প্রদান করছে, যা বায়ুমণ্ডলীয় গতিবিদ্যা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে রূপান্তরিত করতে পারে।
বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণার বাইরেও, এই প্রযুক্তি গ্রহ অনুসন্ধানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মঙ্গল গ্রহের মতো গ্রহগুলোর পাতলা বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর মেসোস্ফিয়ারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই যন্ত্রগুলো মহাকাশের পরিবেশেও অভিযোজিত হতে পারে। এটি মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়ার ধরণ অধ্যয়নে সহায়তা করতে পারে এবং গ্রহীয় বায়ুমণ্ডল বোঝার জন্য ভবিষ্যৎ মিশনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
গবেষণা দলটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন হার্ভার্ডের প্রাক্তন স্নাতক ছাত্র বেন শেফার, ডেভিড কিথ (বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর অধ্যাপক) এবং জোস্ট ভ্লাসাক (SEAS-এর ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক) এর সাথে যৌথভাবে কাজ করেছেন। তাদের এই কাজ রেয়ারিফাইড টেকনোলজিস (Rarefied Technologies) নামক একটি স্টার্টআপের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অগ্রগতি বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অন্যান্য গ্রহের অনুসন্ধানের জন্যও নতুন পথ খুলে দিয়েছে।