মহাকাশে চীনা নভোচারীদের উৎসব: তিয়ানগং থেকে পৃথিবীর প্রতি শ্রদ্ধা

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

২০২৫ সালের ৬ই অক্টোবর, চীনের নভোচারীরা পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থিত তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশন থেকে ঐতিহ্যবাহী মধ্য-শরৎ উৎসব উদযাপন করেছেন। শেনঝৌ-২০ মিশনের কমান্ডার চেন ডং এবং নভোচারী চেন ঝংরুই ও ওয়াং জি পৃথিবীর ৪00 কিলোমিটার উপর থেকে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেন। এই বিশেষ দিনে মহাকাশের নিস্তব্ধতা থেকে তাঁরা মাতৃভূমি ও পৃথিবীর মানুষের প্রতি গভীর সংযোগ অনুভব করেন।

মহাকাশচারীদের উৎসবে ছিল বিশেষ আয়োজন। তাঁদের ভোজের তালিকায় ছিল সাদা কিং অয়েস্টার মাশরুম, শুয়োরের মাংসের ঝোল, কালো মরিচের গরুর মাংসের ফিলেট এবং অবশ্যই লাল শিমের পুর ভরা ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রপিঠা বা মুনকেক। কমান্ডার চেন ডং মন্তব্য করেন যে, পৃথিবী থেকে দূরে থেকেও তাঁদের মন সর্বদা জন্মভূমির সাথে সংযুক্ত থাকে এবং তাঁরা যেন এক ঘর থেকে অন্য ঘরে দৃষ্টিপাত করছেন। এই অনুভূতিটি মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, যেখানে দূরত্ব কেবল একটি সংখ্যা মাত্র, কিন্তু হৃদয়ের টান অটুট থাকে।

শেনঝৌ-২০ মহাকাশযানটি এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং এটি অক্টোবর মাসের শেষ দিকে পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা, যার মাধ্যমে মহাকাশ স্টেশনে তাঁদের ছয় মাসের অবস্থান পূর্ণ হবে। এই মিশনটি চীনের মানব মহাকাশ কর্মসূচির ৩৫তম উড্ডয়ন এবং মহাকাশ স্টেশনের প্রয়োগ ও উন্নয়ন পর্যায়ের পঞ্চম ক্রুড মিশন। নভোচারীরা মহাকাশে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মহাকাশ হাঁটার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন।

তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশন, যা ২০২২ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে, চীনের মানব মহাকাশ অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। উৎসবের সকালে নভোচারীরা মহাকাশ বাগানের চারাগাছগুলিতে জল দেন, যা তাঁদের পার্থিব জীবনের স্পন্দন বহন করে। চেন ঝংরুই একটি পুদিনা গাছের ছোট ফুল ফোটার কথা উল্লেখ করেন, যা মহাকাশেও জীবনের সজীবতা বজায় থাকার ইঙ্গিত দেয়। মধ্য-শরৎ উৎসব, যা মুনকেক উৎসব নামেও পরিচিত, চীনা চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি বছর পালিত হয় এবং এই বছর তা অক্টোবরের ৬ তারিখে পড়েছে।

মহাকাশ থেকে চাঁদকে দেখা এক বিশেষ অভিজ্ঞতা, কারণ নভোচারীরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মেঘের বাধা ছাড়াই চাঁদকে অনেক উজ্জ্বল ও স্পষ্ট দেখতে পান। তাঁরা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে শুভেচ্ছা জানান, যেখানে পরিবারগুলি একত্রিত হয়। এই মহাকাশচারীদের উদযাপন প্রমাণ করে যে, স্থান বা দূরত্ব যাই হোক না কেন, সম্মিলিত মানব অভিজ্ঞতার মুহূর্তগুলি সর্বদা সংযুক্ত থাকে এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জই গভীরতর উপলব্ধির সুযোগ এনে দেয়। তাঁদের এই মহাকাশযাত্রা কেবল বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক নয়, বরং দূরত্বের বাধা পেরিয়ে ঐতিহ্য ও মানবিক বন্ধনকে সমুন্নত রাখার এক দৃষ্টান্ত।

উৎসসমূহ

  • Space.com

  • Friends of NASA

  • NASASpaceFlight.com

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।