পৃথিবীর কক্ষপথ বর্তমানে মহাকাশ বর্জ্যের কারণে ক্রমশই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, যা সক্রিয় উপগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায়, ALBATOR প্রকল্পটি একটি অভিনব, অ-কাইনেটিক (স্পর্শবিহীন) পদ্ধতির মাধ্যমে মহাকাশ আবর্জনা অপসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই উদ্যোগটি টেকসই মহাকাশ পরিচালনার ক্ষেত্রে €৩.৯ মিলিয়ন ইউরোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের প্রতীক, যা ইউরোপীয় ইনোভেশন কাউন্সিলের পাথফাইন্ডার কর্মসূচির অধীনে অর্থায়ন লাভ করেছে।
ALBATOR-এর মূল প্রযুক্তিটি হলো আয়ন রশ্মি ব্যবহার করে বিপজ্জনক বর্জ্যকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া। এই প্রকল্পের পূর্ণরূপ হলো 'ECR-Based Multicharged Ion Beam for Active Debris Removal and Other Remediation Strategies', যা নির্দেশ করে যে এটি চার্জযুক্ত কণা ব্যবহার করে মহাজাগতিক আবর্জনাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে তার গতিপথ পরিবর্তন করবে। এই কৌশলটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে বর্জ্য অপসারণের সময় কোনো প্রকার শারীরিক সংস্পর্শের ঝুঁকি এড়ানো যায়, যা বিশাল জাল বা সরাসরি ডকিং-এর মতো প্রচলিত পদ্ধতির একটি বড় দুর্বলতা, কারণ সেই পদ্ধতিগুলি নতুন বর্জ্য তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
ফরাসি স্টার্টআপ Osmos X এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সমন্বয় করছে, যারা মহাকাশ থ্রাস্টার তৈরিতে বিশেষজ্ঞ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নিজস্ব মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান তৈরির লক্ষ্য রাখে। এই উদ্যোগে স্পেন ও জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং NorthStar-এর লুক্সেমবার্গ শাখা অংশীদার হিসেবে যুক্ত রয়েছে। NorthStar মহাকাশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত পণ্য সরবরাহ করে এবং তাদের কর্মকর্তারা মনে করেন যে ক্যাপচার বা ডকিং-এর ঝুঁকি এড়িয়ে ALBATOR মহাকাশ স্থায়িত্বের জন্য একটি নিরাপদ ও বহুমুখী সমাধান দিতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের একটি ব্যবসা-কেন্দ্রিক সংস্থা সেপ্টেম্বর মাসে এই তহবিলের অনুমোদন দেয় এবং প্রকল্পটি ৩.৫ বছরের জন্য নির্ধারিত, যার সমাপ্তি ২০২৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাশিত। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) অনুমান করে যে কক্ষপথে ১ মিলিমিটারের মতো ছোট আকারের প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মহাকাশ বর্জ্যের টুকরা রয়েছে, যা এই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে। ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)-এর একটি এপ্রিল মাসের গবেষণা অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে উপগ্রহ থেকে পৃথিবীতে প্রবেশ করা বর্জ্যের পরিমাণ উল্কাপিণ্ড থেকে আসা ধূলিকণার পরিমাণের সমান হতে পারে, যা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে।
যদিও এই প্রযুক্তির প্রদর্শক মহড়ার জন্য নির্দিষ্ট উড্ডয়নের তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবুও মহাকাশ আবর্জনা পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা কেবল বাড়তেই থাকবে। এই প্রচেষ্টা মহাকাশকে সকলের জন্য একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ক্ষেত্র হিসেবে বজায় রাখার দিকে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
