গ্রহাণু অ্যাপোফিস পর্যবেক্ষণ: ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার 'র‍্যামসেস' মিশনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) গ্রহাণু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে 'র‍্যামসেস' (Rapid Apophis Mission for Space Safety) অভিযানটির প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই বিশেষ মিশনটি বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে আগামী ২০২৯ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করতে যাওয়া গ্রহাণু অ্যাপোফিসকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এই মহাজাগতিক ঘটনাটি মানবজাতির জন্য এক বিরল বৈজ্ঞানিক সুযোগ এনে দিয়েছে।

প্রায় ৩৪০ মিটার ব্যাসের গ্রহাণু অ্যাপোফিস ২০২৯ সালের ১৩ই এপ্রিল পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩১,৮৬০ কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দূরত্ব পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি থাকা কিছু যোগাযোগ উপগ্রহের দূরত্বের চেয়েও কম। প্রাচীন মিশরীয় বিশৃঙ্খলার দেবতা অ্যাপোফিসের নামে নামকরণ করা এই গ্রহাণুটি এত বড় আকারের কোনো বস্তুর পৃথিবীর এত কাছাকাছি আসার এক বিরল ঘটনা, যা প্রতি ৭,৫০০ বছরে একবার ঘটে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন। যদিও বর্তমানে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে এটি পৃথিবীর জন্য কোনো বিপদ সৃষ্টি করবে না, তবে এর আচরণ পর্যবেক্ষণ করা ভবিষ্যতের গ্রহ প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

র‍্যামসেস মিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই মহাজাগতিক সাক্ষাতের এক বছর আগে, অর্থাৎ সম্ভবত ২০২৮ সালের এপ্রিল বা মে মাসে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হবে, যাতে এটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসার আগেই ফেব্রুয়ারি ২০২৯-এর মধ্যে অ্যাপোফিসের কাছে পৌঁছাতে পারে। এই মহাকাশযানটি পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাবের অধীনে গ্রহাণুটির আকার, আকৃতি, গঠন, ঘূর্ণন এবং গতিপথ পরিমাপ করার জন্য বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম স্থাপন করবে। এই ধরনের শক্তিশালী বাহ্যিক মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবে একটি গ্রহাণু কীভাবে সাড়া দেয়, তা জানা ভবিষ্যতের জন্য অমূল্য তথ্য সরবরাহ করবে।

এই মিশনের একটি বিশেষ দিক হলো, র‍্যামসেস মহাকাশযানটি অ্যাপোফিসের কাছে দুটি ছোট কিউবস্যাট (CubeSats) স্থাপন করবে। এর মধ্যে একটি কিউবস্যাট গ্রহাণুর পৃষ্ঠে অবতরণের চেষ্টা করবে এবং পৃথিবীর কাছাকাছি আসার সময় এর ভূকম্পন কার্যকলাপ পরিমাপ করতে পারে। এই মিশনের প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য ইএসএ ইতিমধ্যেই ১.৫ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে OHB Italia-এর সাথে প্রাথমিক কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে, র‍্যামসেসের পূর্ণ অনুমোদন এবং অর্থায়ন নির্ভর করছে ২০২৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় সিদ্ধান্তের উপর।

এই বৈজ্ঞানিক উদ্যোগটি কেবল বিজ্ঞানীদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও এক বিশাল আকর্ষণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ফ্লাইবাই এমন এক মহাজাগতিক প্রদর্শনী, যা কোটি কোটি মানুষ খালি চোখে দেখতে পাবে। ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ এই গ্রহাণুকে রাতের আকাশে একটি দ্রুত চলমান তারার মতো দেখতে পাবে, যা চাঁদের দূরত্ব থেকে মাত্র ১০% দূরত্বের মধ্যে দিয়ে যাবে। এই পর্যবেক্ষণগুলি গ্রহকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে মানবজাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

উৎসসমূহ

  • European Space Agency (ESA)

  • NASA Space News

  • NASA

  • NASA Science

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।