আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নাসা একটি যুগান্তকারী মাইলফলক অর্জন করেছে, তাদের জল পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা ৯৮% পর্যন্ত জল পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মহাকাশে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি, বিশেষ করে চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে জলের গুরুত্ব অপরিসীম; পৃথিবীতে যেখানে জলের সহজলভ্যতা রয়েছে, সেখানে মহাকাশে প্রতিটি ফোঁটা জল অত্যন্ত মূল্যবান। পূর্বে, মহাকাশযানে জল বহন করা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং স্থান সংকুলানের একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যেখানে প্রায় অর্ধেক পেলোড জল বহন করতেই লেগে যেত।
এই প্রেক্ষাপটে, আইএসএস-এর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও জীবন সহায়ক ব্যবস্থা (ECLSS) একটি বন্ধ-লুপ জল পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মহাকাশচারীদের মূত্র, ঘাম এবং কেবিনের আর্দ্রতা সহ বিভিন্ন উৎস থেকে জল সংগ্রহ করে তা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। এই জল পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রয়েছে দুটি প্রধান অংশ: ইউরিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (UPA) এবং ওয়াটার প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (WPA)। ইউপিএ (UPA) ভ্যাকুয়াম ডিস্টিলেশন ব্যবহার করে মূত্র থেকে জল পুনরুদ্ধার করে, যা প্রায় ৭৫% জল ফিরিয়ে আনে।
তবে, এই প্রক্রিয়ার পর যে লবণাক্ত জল (brine) অবশিষ্ট থাকে, তা থেকেও জল পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রাইন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (BPA) যুক্ত করা হয়েছে। এই বিপিএ (BPA)-এর সংযোজনের ফলেই সামগ্রিক জল পুনরুদ্ধারের হার ৯৩-৯৪% থেকে বেড়ে ৯৮% এ পৌঁছেছে। এরপর, ডব্লিউপিএ (WPA) এই পুনরুদ্ধার করা জলকে পরিস্রাবণ, আয়ন বিনিময় এবং অনুঘটকীয় জারণের মতো উন্নত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশুদ্ধ করে। চূড়ান্ত ধাপে, জলের গুণমান নিশ্চিত করতে আয়োডিন যোগ করা হয়, যা এটিকে পৃথিবীর পানীয় জলের মানের চেয়েও উন্নত করে তোলে।
নাসার জীবন সহায়ক ব্যবস্থার একজন কর্মকর্তা জিল উইলিয়ামসন বলেছেন, "এটি জীবন সহায়ক ব্যবস্থার বিবর্তনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভাবুন, আপনি ১০০ পাউন্ড জল নিয়ে মহাকাশে গেলেন, মাত্র দুই পাউন্ড হারালেন, বাকি ৯৮% চক্রাকারে ঘুরতেই থাকল। এটি একটি অসাধারণ অর্জন।"
এই ৯৮% পুনরুদ্ধারের হার মঙ্গল গ্রহের মতো দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের জন্য অপরিহার্য, যেখানে পৃথিবী থেকে জল সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি মহাকাশচারীর প্রতিদিন প্রায় এক গ্যালন জলের প্রয়োজন হয়, যা পান করা, খাবার তৈরি এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই উন্নত জল পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা সেই চাহিদা পূরণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি কেবল আইএসএস-এর মহাকাশচারীদের জীবনযাত্রাই উন্নত করছে না, বরং এটি মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এটি প্রমাণ করে যে, সীমিত সম্পদ ব্যবহার করেও মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদী মানব বসতি স্থাপন সম্ভব, যা আমাদের সৌরজগতে মানুষের পদচিহ্ন বিস্তারের স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।