চাঁদের বুকে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পারমাণবিক শক্তি ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে নাসা তাদের ফিশন সারফেস পাওয়ার (FSP) প্রকল্পের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো মহাকাশচারীদের জন্য চাঁদের পৃষ্ঠে এবং ভবিষ্যতের মিশনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য শক্তির উৎস সরবরাহ করা। এই উদ্যোগটি কিলোপাওয়ার প্রকল্পের মতো পূর্ববর্তী কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এটি নাসার গ্লেন রিসার্চ সেন্টার দ্বারা তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
জানুয়ারি ২০২৫-এ, ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক কোম্পানি নাসা এবং মার্কিন শক্তি বিভাগের (DOE) কাছ থেকে একটি চুক্তি লাভ করে, যার অধীনে তারা এই প্রকল্পের অধীনে একটি মহাকাশ মাইক্রোরিয়্যাক্টর ডিজাইনের উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে। এই চুক্তিটি ওয়েস্টিংহাউসের প্রথম পর্যায়ের সফল নকশা কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা FSP সিস্টেমের নকশা এবং এর কনফিগারেশন অপ্টিমাইজ করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত উপাদানগুলির পরীক্ষা শুরু করার জন্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে FSP সিস্টেমের অগ্রগতি আগামী দশকের মধ্যে চাঁদে একটি প্রদর্শনী মিশনের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করবে। ২০২২ সালের জুন মাসে, নাসা এবং ডিওই তিনটি শিল্প অংশীদারকে নির্বাচন করেছিল: লকহিড মার্টিন, ওয়েস্টিংহাউস এবং আইএক্স (ইনটুইটিভ মেশিনস এবং এক্স-এনার্জির একটি যৌথ উদ্যোগ)। এই অংশীদারদের FSP সিস্টেমের প্রাথমিক নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যার চুক্তি মূল্য ছিল প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার। এর লক্ষ্য ছিল পরবর্তী প্রকল্প কার্যক্রমকে অবহিত করা এবং চাঁদে একটি প্রদর্শনী মিশনের জন্য প্রস্তুত হওয়া। FSP সিস্টেমটি কমপক্ষে ৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য প্রকৌশলী করা হয়েছে, যা প্রায় ৩০টি বাড়ির জন্য এক দশক ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। এই ক্ষমতা চাঁদে এবং মঙ্গল গ্রহে দীর্ঘমেয়াদী মিশনকে সমর্থন করার জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে সেইসব অঞ্চলে যেখানে দীর্ঘ চন্দ্ররাত্রি বা স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত অঞ্চলের কারণে সৌরশক্তি নির্ভরযোগ্য নয়। আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত, নাসা FSP সিস্টেমের নকশা পরিমার্জন করার জন্য শিল্প অংশীদারদের সাথে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। প্রকল্পটি ২০৩০-এর দশকের প্রথম দিকে একটি চন্দ্র প্রদর্শনী মিশনের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এই প্রযুক্তির সফল উন্নয়ন এবং মোতায়েন চাঁদে একটি টেকসই মানব উপস্থিতি স্থাপন এবং মঙ্গল গ্রহের ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ওয়েস্টিংহাউস তাদের eVinci™ মাইক্রোরিয়্যাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশের কঠোর পরিবেশের জন্য একটি স্থিতিস্থাপক এবং ভর-কার্যকরী পারমাণবিক বৈদ্যুতিক শক্তি এবং প্রপালশন সিস্টেম তৈরি করছে। এই প্রযুক্তিটি মহাকাশযান এবং গ্রহ পৃষ্ঠের পাওয়ার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করবে। এই উদ্যোগটি মহাকাশ অনুসন্ধানে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা মানুষকে চাঁদের মতো দূরবর্তী স্থানে দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করবে।