আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)-এর কলম্বাস মডিউলটি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে তার ১৭ বছর পূর্ণ করেছে। ২০০৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি স্পেস শাটল আটলান্টিসের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত এই মডিউলটি মহাকাশে মাইক্রোগ্রাভিটি পরিবেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। কলম্বাস ল্যাবরেটরিটি ফ্লুইড ফিজিক্স, মেটেরিয়াল সায়েন্স এবং লাইফ সায়েন্স সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫০ টিরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে ২১টি বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এর নকশায় ১০টি এক্সপেরিমেন্ট র্যাক রয়েছে, প্রতিটিতে পাওয়ার, কুলিং এবং যোগাযোগের জন্য স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা নিশ্চিত করে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি, কলম্বাস শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও যুক্ত রয়েছে। অ্যাস্ট্রো-পাই (AstroPi) এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ১৬৩,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী আইএসএস-এ তাদের কোড চালানোর সুযোগ পেয়েছে। এই প্রোগ্রামটির লক্ষ্য হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অনুপ্রাণিত করা।
কলম্বাস মডিউলের অপারেশনাল ব্যবস্থাপনা জার্মানির কলম্বাস কন্ট্রোল সেন্টার (Columbus Control Centre) থেকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করা হয়। এই কেন্দ্রটি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)-এর পক্ষে জার্মান মহাকাশ কেন্দ্র (DLR) দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এটি কলম্বাসের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। এই কেন্দ্রটি মডিউলটির সিস্টেম কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ, আইএসএস-এ ইউরোপীয় পেলোডগুলির কার্যক্রম সমন্বয় এবং ইউরোপীয় গ্রাউন্ড কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এখানে প্রায় ৭৫ জন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী আইএসএস-এ ইউরোপীয় কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন। এই কেন্দ্রটি প্রায় ১৯,০০০ শিফট সম্পন্ন করেছে, যা মডিউলটির নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং বৈজ্ঞানিক উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করেছে।
কলম্বাস মডিউলটি ১৬ জন ইএসএ নভোচারী সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং অন্যান্য দেশের নভোচারীদের আশ্রয় দিয়েছে। কিছু নভোচারী মডিউলের ভেতরের CASA ক্রু কোয়ার্টারকে অস্থায়ী বসবাসের স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যা মহাকাশ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
১৭তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে, কলম্বাস মডিউলটি ইউরোপীয় উৎকর্ষতার প্রতীক। এর প্রযুক্তিগুলি অরিয়ন ইউরোপীয় সার্ভিস মডিউলের (Orion European Service Module) মতো অন্যান্য ইউরোপীয় মহাকাশ কর্মসূচিতেও প্রভাব ফেলেছে, যা মানুষকে চাঁদে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর্টেমিস প্রোগ্রামের (Artemis program) অংশ। এই মডিউলটি মহাকাশে ইউরোপের অবদানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।