ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউবিসি) গবেষকরা পারমাণবিক ফিউশন গবেষণায় একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধন করেছেন। তাদের উদ্ভাবিত থান্ডারবার্ড রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করে, তারা ঘরের তাপমাত্রায় ডিউটেরিয়াম-ডিউটেরিয়াম ফিউশন হার ১৫% বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই গবেষণাটি ২০২৫ সালের ২০শে আগস্ট তারিখে নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
থান্ডারবার্ড রিঅ্যাক্টরটি একটি কাস্টম-নির্মিত কণা ত্বরক এবং ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল রিঅ্যাক্টর, যা পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়া অধ্যয়নের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। ইউবিসি দলের উদ্ভাবনী পদ্ধতি হলো ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল লোডিং, যার মাধ্যমে প্যালাডিয়াম ধাতুর একটি টার্গেটকে ডিউটেরিয়াম জ্বালানী দ্বারা সমৃদ্ধ করা হয়। এই কৌশলটি পূর্ববর্তী পদ্ধতিগুলির তুলনায় ফিউশন হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক কার্টিস পি. বার্লিংগেট ব্যাখ্যা করেছেন যে, তাদের ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল লোডিং পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। তিনি বলেন, মাত্র এক ভোল্ট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তারা যে পরিমাণ ডিউটেরিয়াম লোড করতে পেরেছেন, তা সাধারণত ৮০০ অ্যাটমোস্ফিয়ার চাপের সমান। এই গবেষণাটি ইউবিসি-র দীর্ঘদিনের কোল্ড ফিউশন নিয়ে গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা পরিষ্কার শক্তি সমাধানের অন্বেষণে দলটি পুনরায় মনোনিবেশ করেছে।
ঐতিহাসিকভাবে, কোল্ড ফিউশন ধারণাটি ১৯৮৯ সালে মার্টিন ফ্লেইশম্যান এবং স্ট্যানলি পন্স-এর দাবির পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু সেই ফলাফলগুলি পুনরুৎপাদনযোগ্য না হওয়ায় তা সন্দেহের মুখে পড়ে। তবে, ইউবিসি-র বর্তমান গবেষণাটি সেই পুরনো ধারণার থেকে ভিন্ন। তারা সরাসরি নিউট্রন নির্গমনের মতো পারমাণবিক স্বাক্ষর পরিমাপ করেছেন, যা ফিউশন বিক্রিয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ। এই পদ্ধতিটি বৃহৎ আকারের ম্যাগনেটিক কনফাইনমেন্ট ফিউশন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যেখানে সূর্য বা হাইড্রোজেন বোমার মতো চরম তাপমাত্রা ও চাপের প্রয়োজন হয়।
যদিও এই পরীক্ষায় এখনও নেট শক্তি লাভ হয়নি, তবে এটি একটি পুনরুৎপাদনযোগ্য প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে যা অন্যান্য গবেষকরা আরও উন্নত করতে পারবেন। অধ্যাপক বার্লিংগেট আশা করেন যে এই কাজটি ফিউশন বিজ্ঞানকে বিশাল জাতীয় গবেষণাগার থেকে সরিয়ে এনে সাধারণ গবেষণাগারে নিয়ে আসবে, যা এই ক্ষেত্রে আরও অনুসন্ধানের জন্য উৎসাহ প্রদান করবে।