যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি যুগান্তকারী চুক্তির মাধ্যমে উন্নত পারমাণবিক প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছে। এই অংশীদারিত্ব উভয় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো পারমাণবিক প্রকল্পগুলির অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা, যা বর্তমানে তিন থেকে চার বছর সময় নেয়, তা প্রায় দুই বছরে নামিয়ে আনা। এই উদ্যোগ নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে গতি আনবে, জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে এবং উচ্চমানের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এই সহযোগিতার ফলে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এক্স-এনার্জি (X-Energy) এবং সেন্ট্রিকা (Centrica) উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের হার্টলপুলে ১২টি উন্নত মডিউলার রিঅ্যাক্টর (advanced modular reactors) নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। হল্টেক (Holtec) এবং ইডিএফ (EDF) নটিংহ্যামশায়ারে ছোট মডিউলার রিঅ্যাক্টর (small modular reactors) দ্বারা চালিত ডেটা সেন্টার (data centers) তৈরির জন্য অংশীদারিত্ব করেছে। যুক্তরাজ্য সরকার এই বাণিজ্যিক চুক্তিগুলির মূল্যমান ৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের (৬৮ বিলিয়ন ডলার) বেশি বলে অনুমান করছে।
পারমাণবিক শক্তির সম্প্রসারণ যুক্তরাজ্যের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সুপারপাওয়ার (clean energy superpower) মিশনের একটি মূল স্তম্ভ। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ রাশিয়ার পারমাণবিক উপাদানের উপর নির্ভরতা ২০২৮ সালের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণরূপে দূর করার পরিকল্পনা করেছে। এটি জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা বাড়াবে এবং পশ্চিমা দেশগুলির পারমাণবিক জ্বালানি বাজারে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। যুক্তরাজ্য বর্তমানে পারমাণবিক শিল্পে রেকর্ড সংখ্যক ৯৮,০০০ কর্মী নিয়োগ করেছে, যার মধ্যে এই বছর ১১,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারি বিনিয়োগের দ্বারা সমর্থিত।
এই অংশীদারিত্ব উভয় দেশকে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পারমাণবিক জ্বালানি খাতে অগ্রণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এটি একটি টেকসই এবং সুরক্ষিত জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই চুক্তিটি কেবল জ্বালানি নিরাপত্তাই বাড়াবে না, বরং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রবৃদ্ধি আনতেও সহায়ক হবে। এই অংশীদারিত্বের ফলে পারমাণবিক প্রযুক্তির লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে, যা নতুন প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এটি যুক্তরাজ্যকে একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সুপারপাওয়ার হিসেবে গড়ে তোলার সরকারি লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।