ইন্টারনেট আর্কাইভের ওয়েব্যাক মেশিন তার ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক ট্রিলিয়ন (এক লক্ষ কোটি) এরও বেশি ওয়েব পেজ সংরক্ষণ করে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এই বিশাল ডিজিটাল সংগ্রহটি বর্তমানে প্রায় ১৫০ পেটা বাইট ঐতিহাসিক ওয়েব ডেটা ধারণ করে, যা ইন্টারনেটের বিবর্তনের একটি বিস্তৃত, সময়-চিহ্নিত রেকর্ড হিসেবে কাজ করছে। এই বিশাল অর্জনটি জ্ঞানের সর্বজনীন প্রবেশাধিকার বজায় রাখার প্রতি গভীর অঙ্গীকারকে জোর দেয় এবং অনলাইন বিষয়বস্তুর ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ জবাব প্রদান করে।
এই সুবিশাল আর্কাইভটি গবেষক, অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং ইতিহাসবিদদের জন্য একটি অপরিহার্য সম্পদ। তারা প্রায়শই “লিঙ্ক রট” নামক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন উৎসগুলো কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়। ওয়েব্যাক মেশিন ডিজিটাল নিদর্শনগুলিতে স্থায়ী প্রবেশাধিকার সরবরাহ করে যা অন্যথায় বিলীন হয়ে যেতে পারত, ফলস্বরূপ ইন্টারনেটের সম্মিলিত স্মৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। এটি নিশ্চিত করে যে আজকের ডিজিটাল আউটপুট ভবিষ্যতের ঐতিহাসিক বোঝাপড়াকে সঠিকভাবে রূপ দিতে পারে।
এই বিশাল মাইলফলকটিকে স্মরণীয় করে রাখতে, ইন্টারনেট আর্কাইভ অক্টোবর ২০২৫ জুড়ে একাধিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এই উদযাপন সিরিজের সমাপ্তি ঘটবে ২২ অক্টোবর সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত তাদের সদর দপ্তরে একটি মূল সমাবেশের মাধ্যমে, যার সাথে বিশ্বব্যাপী লাইভস্ট্রিমের ব্যবস্থাও থাকবে। এই আয়োজনটি ওয়েবের একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরির জন্য বিনিয়োগ করা সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে সম্মান জানায় এবং সংরক্ষণ ও নথিভুক্ত করার সম্মিলিত মানব ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।
বৃহত্তর সংরক্ষণ নেটওয়ার্কে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অবদান রেখেছে। তারা ইন্টারনেট আর্কাইভ ইউরোপের (Internet Archive Europe) ছাতার নিচে জাতীয় ওয়েব-আর্কাইভিং উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই কাজটি নিশ্চিত করে যে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক আখ্যানগুলো বিশ্বব্যাপী ওয়েব ডেটার প্রবাহের পাশাপাশি সমানভাবে সংরক্ষিত থাকে, যা ঐতিহাসিক রেকর্ডের ধারাবাহিকতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
ব্রুস্টার কাহলে কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট আর্কাইভকে প্রথম থেকেই “ইন্টারনেটের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার” (Library of Alexandria for the Internet) হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। এক ট্রিলিয়ন পেজের এই বিশাল মাইলফলক অর্জনের ফলে সেই দূরদর্শী স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের আরও কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা ডিজিটাল যুগের জ্ঞান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।