বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার, উইকিপিডিয়ার প্রত্যক্ষ মানব পাঠক সংখ্যায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২৫ সালের মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে সরাসরি ব্যবহারকারীর আগমন প্রায় ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই পরিবর্তন মূলত জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধানের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ফল।
মার্শাল মিলার, যিনি উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (কোর এক্সপেরিয়েন্সেস), এই পরিস্থিতিকে সরাসরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সার্চ ইঞ্জিনগুলি এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নের সরাসরি উত্তর প্রদান করছে, যা প্রায়শই উইকিপিডিয়ার তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। একটি স্বাধীন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, গুগলের অর্ধেকেরও বেশি অনুসন্ধান ক্লিক ছাড়াই শেষ হয়ে যায়, এবং এআই-এর সারসংক্ষেপ এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মজার বিষয় হলো, বেশিরভাগ বৃহৎ ভাষা মডেল (LLMs) উইকিপিডিয়ার ডেটাসেট ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, অথচ এই মডেলগুলিই মূল উৎস থেকে পাঠককে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি উইকিপিডিয়ার মূল কাঠামো—স্বেচ্ছাসেবক অবদান এবং ব্যক্তিগত অনুদান—এর উপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যখন সরাসরি দৃশ্যমানতা কমে যায়, তখন নতুন সম্পাদকদের আগ্রহ কমে যেতে পারে এবং দাতারাও নিরুৎসাহিত হতে পারেন।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা কেবল তথ্যের সঠিক স্বীকৃতি বা অ্যাট্রিবিউশন কাঠামোর উপর জোর দিচ্ছে না, বরং ইউটিউব এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে নতুন শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু করেছে। ফাউন্ডেশন নতুন স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়েও পরীক্ষা চালাচ্ছে, যাতে নতুন প্রতিভা সহজে সম্প্রদায়ে যুক্ত হতে পারে।
এই পটভূমিতে, উইকিপিডিয়ার লক্ষ্য হলো জ্ঞানের এই মুক্ত প্রবাহকে বজায় রাখা। তারা এমন একটি পরিবেশ তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে যেখানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও জ্ঞানের উৎসকে সম্মান জানানো হয়। এই পরিবর্তন এক বৃহত্তর উপলব্ধির সুযোগ এনে দেয়: তথ্যের প্রবাহের পথ পরিবর্তিত হলেও, নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে উইকিপিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। অভ্যন্তরীণভাবে জ্ঞানের প্রতি অঙ্গীকার এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এই ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।