স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন তাদের প্রথম ট্রিপল ফোল্ডিং ডিভাইসটি উন্মোচন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যার সম্ভাব্য নাম ‘গ্যালাক্সি জি ফোল্ড’। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনের মঞ্চ থেকে করা হবে। এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মটি বেছে নেওয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটি ফোল্ডেবল গ্যাজেট বাজারে তাদের নেতৃত্ব আরও দৃঢ় করতে চাইছে। বিশেষত হুয়াওয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের নতুন নতুন উদ্ভাবনের মুখে স্যামসাংয়ের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সম্মেলনটি ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এই নতুন ডিভাইসটিতে একটি জটিল প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে দুটি কব্জা (hinges) রয়েছে। এর ফলে ডিভাইসটি সহজেই একটি সাধারণ স্মার্টফোন থেকে ট্যাবলেটের আকারে রূপান্তরিত হতে পারে। ভাঁজ করা অবস্থায়, এর বাইরের ডিসপ্লেটির আকার বর্তমান গ্যালাক্সি ফোল্ড মডেলগুলির মতোই প্রায় ৬.৫ ইঞ্চি থাকবে। তবে, ডিভাইসটি পুরোপুরি খোলা হলে ব্যবহারকারীরা প্রায় ১০ ইঞ্চি ডায়াগোনালের একটি বিশাল কর্মক্ষেত্র পাবেন। ফোন এবং ট্যাবলেটের এই কার্যকারিতার সংমিশ্রণটি মাল্টিটাস্কিংয়ের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক পরিষেবাগুলির জন্য উন্নত সমর্থন নিশ্চিত করবে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে, গ্যালাক্সি জি ফোল্ডে শক্তিশালী হার্ডওয়্যার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে স্ন্যাপড্রাগন ৮ এলিট চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে এবং ১৬ জিবি পর্যন্ত র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি (RAM) থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফটোগ্রাফির জন্য, এতে একটি ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ থাকবে, যার মূল সেন্সরটি হবে ২০০ মেগাপিক্সেলের। তিনটি ডিসপ্লে সহ এই জটিল কাঠামোকে শক্তি যোগানোর জন্য, এতে ৫০০০ mAh এর বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তিন-বিভাগের ব্যাটারি ব্যবহার করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে যে অ্যাপেক সম্মেলনে এই ডিভাইসটির একটি প্রদর্শনীমূলক উপস্থাপনা করা হবে। এর পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক লঞ্চ চলতি বছরের (২০২৫) শেষ হওয়ার আগেই সম্পন্ন হবে। স্যামসাং এই মডেলটির জন্য ২০২৫ সালের আগস্ট মাসেই কেসি (KC) সার্টিফিকেশন অর্জন করেছিল, যা বাজারে পণ্যটি দ্রুত নিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়। যদিও শুরুতে উৎপাদন সীমিত পরিমাণে রাখা হবে—মাত্র কয়েক হাজার ইউনিট—যা ডিভাইসটির একটি বিশেষায়িত বা নিশে (niche) স্ট্যাটাস নির্দেশ করে।
মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে, এর আনুমানিক খরচ ৩ মিলিয়ন ওন (দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা) ছাড়িয়ে যাবে, যা প্রায় ২১৩৫ মার্কিন ডলারের সমতুল্য। যদিও কিছু সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে এর দাম ৩০০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছিও হতে পারে। সীমিত আকারে শুরু হলেও, স্যামসাংয়ের এই ডিভাইসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) বাজারসহ বৃহত্তর ভৌগোলিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী বাজারে আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে স্যামসাংয়ের প্রস্তুতির প্রমাণ দেয়।