ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ২০০৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী প্রচারণার অবৈধ অর্থায়নের জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্যারিস জুডিশিয়াল কোর্ট বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের ফলে ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ১ লক্ষ ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। এই দণ্ড স্থগিত রাখা হয়েছে, যার অর্থ সারকোজিকে অবিলম্বে হেফাজতে নেওয়া হবে না, তবে এক মাসের মধ্যে তাকে প্রসিকিউটরের কাছে তলব করা হবে, যিনি তার কারাবাসের শুরুর তারিখ জানাবেন।
এই মামলাটি লিবিয়ার প্রয়াত স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনব্যবস্থার তহবিল থেকে সারকোজির ২০০৭ সালের সফল রাষ্ট্রপতি প্রচারণার কথিত অবৈধ অর্থায়ন সম্পর্কিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের সাথে জড়িত। তদন্ত অনুসারে, ২০০৫ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারকোজি এবং গাদ্দাফির মধ্যে একটি "দুর্নীতিমূলক চুক্তি" হয়েছিল। সারকোজির নির্বাচনী সদর দফতর ৫০ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছিল, যা প্রচারণায় বিদেশী অর্থায়নের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে, এবং এর বিনিময়ে ফরাসি রাজনীতিবিদকে বিশ্ব মঞ্চে গাদ্দাফিকে আর বিচ্ছিন্ন না থাকতে সাহায্য করার কথা ছিল। সারকোজি এবং তার আইনি দল তার নির্দোষিতার দাবি করেছেন এবং এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন। উল্লেখ্য, আদালত রায় দিয়েছে যে আপিল সত্ত্বেও সারকোজিকে তার সাজা ভোগ করতে হবে, যা বিস্ময় ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তার কারাবাসের শুরুর তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
এটি নিকোলাস সারকোজিকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া দ্বিতীয় ফরাসি প্রেসিডেন্টে পরিণত করেছে। সারকোজি ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই মামলার অভিযোগগুলি ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়, যখন একটি লিবিয়ার সংবাদ সংস্থা এবং গাদ্দাফি নিজেই দাবি করেছিলেন যে লিবিয়ার রাষ্ট্র গোপনে সারকোজির ২০০৭ সালের প্রচারণার জন্য লক্ষ লক্ষ ইউরো সরবরাহ করেছিল। ২০১২ সালে, ফরাসি অনুসন্ধানী আউটলেট মিডিয়াপার্ট কী বলেছিল তা প্রকাশ করেছিল যে এটি একটি লিবিয়ার গোয়েন্দা স্মারক ছিল যা ৫০ মিলিয়ন ইউরোর অর্থায়নের চুক্তির উল্লেখ করে।
সারকোজি এই নথিটিকে জাল বলে নিন্দা করেছিলেন এবং মানহানির মামলা করেছিলেন। আদালত বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে যে এই নথিটি সম্ভবত জাল। এই রায় ফরাসি বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে। সারকোজি এই রায়ের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এই ঘটনাটি ফ্রান্সের রাজনীতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।