প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ল্যাব-উৎপাদিত পনির: দুগ্ধ শিল্পের বাধা অতিক্রমের পথে

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

খাদ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে, নির্ভুল গাঁজন (precision fermentation) প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রাণীজ দুধ ছাড়াই হুবহু দুগ্ধ-সদৃশ প্রোটিন, যেমন কেসিন এবং হুই, তৈরি করা হচ্ছে। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রচলিত পশুপালন ব্যবস্থার একটি টেকসই বিকল্প পথ খুলে দিচ্ছে। জেনেটিক্যালি মডিফাইড ইস্ট এবং ব্যাকটেরিয়াকে বায়োরিয়্যাক্টরে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট উপাদানগুলি উৎপাদন করা হয়, যা জল, জমি এবং শক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ কালচার (New Culture) এবং জার্মানির ফোর্মো (Formo)-এর মতো সংস্থাগুলি এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। নিউ কালচার মূলত দুধের প্রোটিন-ভিত্তিক পনির উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে, যা পনিরের চিরাচরিত স্বাদ, গলে যাওয়া এবং টানটান ভাব বজায় রাখতে সক্ষম। অন্যদিকে, ফোর্মো কোজি ছত্রাকের প্রোটিন ব্যবহার করে প্রাণী-মুক্ত পনিরের বিকল্প তৈরি করছে। এই প্রযুক্তি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু বা প্রাণীজ পণ্য বর্জনকারী ভোক্তাদের জন্য একটি সমাধান নিয়ে আসে।

তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) বাজারে এই নতুন খাদ্যদ্রব্যগুলির প্রবেশাধিকার এখনও কঠিন। কঠোর বিধিমালা, বিশেষত জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (GMO) সংক্রান্ত আইন, অনুমোদনের প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ইউরোপীয় খাদ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (EFSA)-এর কাছে প্রয়োজনীয় তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব এবং প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা স্টার্টআপগুলির জন্য একটি বড় বাধা সৃষ্টি করছে। এই কারণে অনেক কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা সিঙ্গাপুরের মতো অপেক্ষাকৃত সহজ বাজারগুলিতে মনোযোগ দিচ্ছে, যেখানে উদ্ভাবন-বান্ধব পরিবেশ বিদ্যমান।

নামকরণের ক্ষেত্রেও আইনি জটিলতা রয়েছে; ইইউ আইনের অধীনে, কোনো পণ্যকে 'পনির' হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে তাতে দুধ থাকা আবশ্যক, যা এই প্রাণী-মুক্ত বিকল্পগুলির নামকরণের ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, ফোর্মো এবং দোজ ভেগান কাউবয়জ (Those Vegan Cowboys)-এর মতো ইউরোপীয় সংস্থাগুলি ফুড ফার্মেন্টেশন ইউরোপ (Food Fermentation Europe) জোট গঠন করেছে, যাতে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সাথে একযোগে আলোচনা করতে পারে। এই জোট পণ্যের নামকরণ ও অনুমোদন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে।

এই সমস্ত বাধা অতিক্রম করার প্রচেষ্টা খাদ্য ব্যবস্থার একটি বৃহত্তর রূপান্তরের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে উদ্ভাবনী শক্তি পরিবেশগত দায়বদ্ধতা এবং ভোক্তার চাহিদা পূরণের মধ্যে এক নতুন ভারসাম্য স্থাপন করতে চাইছে। জোটের মাধ্যমে সংস্থাগুলি আগামী দশকে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য সরবরাহ করার লক্ষ্য স্থির করেছে, যা এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক সাফল্যকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উৎসসমূহ

  • EL PAÍS

  • El País

  • ICEX España Exportación e Inversiones

  • Ministerio de Agricultura, Pesca y Alimentación

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।