খাদ্য শিল্পে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে, যেখানে 'ফ্রুটপ্রিন্ট' নামক একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ফল ও সবজির সংরক্ষণকাল দীর্ঘায়িত করার জন্য প্রাকৃতিক জৈব-সক্রিয় অণুগুলির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে। এই প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে কৃষি-খাদ্য খাতের কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস এবং খাদ্য অপচয় কমানোর এক সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গবেষকরা বর্তমানে ফল পাকানোর প্রক্রিয়া মন্থর করার জন্য ক্যারোটিনয়েডস এবং অ্যাপোকারোটিনয়েডস নামক প্রাকৃতিক যৌগগুলির উপর বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন, যা তাদের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
এই প্রাকৃতিক সমাধানগুলি প্রচলিত সংরক্ষণ পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেমন নিয়ন্ত্রিত বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চয়স্থান অথবা ১-এমসিপি-এর মতো রাসায়নিক প্রতিরোধক, কারণ সেই রাসায়নিকগুলি খাদ্যের গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে। খাদ্য সংরক্ষণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহারের এই প্রবণতা গ্রাহকদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও রাসায়নিকমুক্ত পণ্যের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রতিফলন। ক্যারোটিনয়েডস, যেমন গাজরের বিটা-ক্যারোটিন এবং টমেটোর লাইকোপিন, কেবল খাদ্যকে রঙই দেয় না, বরং অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকেও রক্ষা করে। এই ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান খাদ্যকে অবনতি থেকে রক্ষা করে এবং একই সাথে খাদ্যের সংবেদনশীল গুণাবলী বজায় রাখতে সাহায্য করে।
খাদ্য অপচয় একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা কেবল সম্পদের অপচয় নয়, পরিবেশের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪০ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়, যা মিথেন গ্যাসের মতো শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত ফসলের প্রায় ৩০ শতাংশই ফসল তোলার পরে নষ্ট হয়। এই প্রেক্ষাপটে, প্রাকৃতিক অণু ব্যবহার করে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করা কেবল অর্থনৈতিক লাভ নয়, বরং পরিবেশগত ভারসাম্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই নতুন কৌশলটি প্রচলিত সংরক্ষণ পদ্ধতির তুলনায় এক নতুন পথ উন্মোচন করছে। যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বা রাসায়নিক ইনহিবিটর ব্যবহার করা হতো, সেখানে এখন উদ্ভিদ-ভিত্তিক যৌগগুলির উপর নির্ভরতা বাড়ছে। এই অগ্রগতি খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে, বিশেষত খুচরা এবং ভোক্তা পর্যায়ে, অপচয় কমাতে সহায়ক হবে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খাদ্য অপচয় অর্ধেক করার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে।