ক্রোনোনিউট্রিশন হলো একটি পুষ্টি পদ্ধতি যা শরীরের প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ঘড়ির সাথে খাবারকে সমন্বিত করে হজম এবং সুস্থতাকে সর্বোত্তম করে তোলে। ডায়েটিশিয়ান জুলি বোয়েট (Julie Boët) ব্যাখ্যা করেছেন যে এই পদ্ধতিটি কোনো খাবার বাদ না দিয়ে বা কঠোর ডায়েট অনুসরণ না করেই, দৈনিক হরমোন এবং শক্তির চাহিদা অনুযায়ী খাবারকে সাজিয়ে তোলে।
এই পদ্ধতির মূল নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে একটি পুষ্টিকর সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবারে প্রোটিন ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার, বিকেল ৪-৫টার দিকে একটি হালকা জলখাবার এবং রাতে হালকা বা ঐচ্ছিক ডিনার। এই অভ্যন্তরীণ ঘড়ির যুক্তি খাবারকে চর্বি হিসেবে জমা হওয়া থেকে বিরত রাখে। ক্রোনোনিউট্রিশনের সুবিধাগুলির মধ্যে উন্নত হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য, জৈবিক ছন্দের সাথে খাবারকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মাধ্যমে উন্নত হজম এবং দেরিতে খাবার এড়িয়ে ঘুমের মান উন্নত করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ঘড়ির সাথে খাবার গ্রহণকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করলে তা বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। বিশেষ করে, দিনের শুরুতে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ এবং সন্ধ্যায় কম গ্রহণ ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যারা দুপুরের খাবারের আগে তাদের প্রধান খাবার খান, তারা যারা দেরিতে খান তাদের তুলনায় বেশি ওজন হ্রাস করেন। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সম্মান করার মাধ্যমে খাবারকে আরও ভালোভাবে প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে।
ক্রোনোনিউট্রিশন কেবল কখন খাওয়া উচিত তা-ই নয়, বরং এটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক শক্তির বক্ররেখার সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাবার গ্রহণের উপরও জোর দেয়। দিনের শুরুতে একটি পুষ্টিকর নাস্তা গ্রহণ শরীরকে সক্রিয় এবং শক্তিপূর্ণ হওয়ার সংকেত দেয়। এই পদ্ধতিটি শরীরের হরমোন নিঃসরণ, শরীরের তাপমাত্রা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের মতো জৈবিক প্রক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করে। দেরিতে খাবার গ্রহণ শরীরের স্বাভাবিক ছন্দকে ব্যাহত করতে পারে এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সময়ের সাথে সাথে, এই প্রাকৃতিক সমন্বয় সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনতে পারে।
এই পদ্ধতি গ্রহণের জন্য খাবারের নিয়মিত সময় বজায় রাখা এবং গভীর রাতে খাওয়া থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। দেরিতে খাবার গ্রহণ বিপাককে ধীর করে দিতে পারে এবং শরীরের চর্বি সংরক্ষণে সহায়তা করতে পারে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের হরমোনগুলির উপরও প্রভাব ফেলে, যার ফলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।