খাদ্য অপচয় রোধে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিয়ে ভুল ধারণা: দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যদ্রব্য ও অপচয় রোধ

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

অনেকেই খাবারের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং অনেক সময় খাবার ব্যবহারযোগ্য থাকার আগেই ফেলে দেন। এই ভয়ের কারণে প্রায়শই এমন সব খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেওয়া হয় যা তখনও খাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ কি সবসময়ই খাবারের অনিরাপদ হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়? সাধারণত আমরা মনে করি, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর খাবার খাওয়া নিরাপদ নয়। তবে অনেক খাদ্যদ্রব্য তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও পুষ্টিগুণ ধরে রাখে। হয়তো তাদের স্বাদ বা গঠন কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু তা তাদের খাওয়ার অযোগ্য করে তোলে না। কোন কোন খাবার দীর্ঘ সময় ধরে ভালো থাকে তা জানা থাকলে আমরা অর্থ সাশ্রয় করতে পারি এবং অপ্রয়োজনীয় খাদ্য অপচয় কমাতে পারি। এটি আমাদের আরও সচেতনভাবে খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে এবং বর্জ্যের পরিমাণ কমায়।

লবণ, চিনি এবং মধু হলো এমন কিছু খাদ্যদ্রব্য যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে প্রায় অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ভালো থাকে। বিশুদ্ধ লবণের কোনো মেয়াদ নেই; সঠিক পরিবেশে রাখলে এটি বহু বছর ধরে গুণমান বজায় রাখে। যদিও আয়োডিনযুক্ত বা মশলা মেশানো লবণ ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে গুণমান হারাতে পারে, তবে এটি তখনও খাওয়ার জন্য নিরাপদ থাকে। চিনিও সহজে নষ্ট হয় না। এটি আর্দ্রতা থেকে দূরে শুষ্ক ও বায়ুরোধী পাত্রে রাখলে বহু বছর ভালো থাকে। চিনির ক্ষেত্রে, দানাদার চিনি ২-৩ বছর এবং গুঁড়ো চিনি ২ বছরের মধ্যে ব্যবহার করলে সর্বোত্তম স্বাদ পাওয়া যায়। মধু তার প্রাকৃতিক উপাদানের কারণে প্রায় অনন্তকাল পর্যন্ত টিকে থাকে। এর কম জলীয় অংশ এবং অম্লতা জীবাণু বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। মধু জমে গেলে (crystallize) তা নষ্ট হয়ে যায় না; হালকা গরম জলে পাত্রটি রেখে দিলেই তা আবার তরল হয়ে যায়।

খাদ্য অপচয় রোধে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিয়ে ভুল ধারণা একটি বড় কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, শুধুমাত্র মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই তারিখগুলো খাবারের গুণমান নির্দেশ করে, নিরাপত্তা নয়। শুধুমাত্র শিশুখাদ্যের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত। অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রে, গন্ধ, চেহারা এবং স্বাদ পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি, যেমন - খাবারকে বায়ুরোধী পাত্রে রাখা, আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখা এবং সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা, খাবারের গুণমান বজায় রাখতে এবং অপচয় কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। ফ্রিজে খাবার রাখলে তা কতদিন ভালো থাকবে, তা জানতে ফুডকিপার (FoodKeeper) অ্যাপের মতো সহায়ক সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে। সুতরাং, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখকে অন্ধভাবে অনুসরণ না করে, খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমরা একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় করতে পারি, তেমনই খাদ্য অপচয় কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখতে পারি। এই সচেতনতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক।

উৎসসমূহ

  • Pravda

  • По истечении срока хранения: ГК РФ Статья 889. Срок хранения | КонсультантПлюс

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।