আয়ুর্বেদিক ঘি-জল: হজমশক্তি বৃদ্ধি ও সার্বিক সুস্থতার সোনালী পথ

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

আয়ুর্বেদ, ভারতের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা, উষ্ণ জলের সাথে ঘি (বিশুদ্ধ মাখন) সেবনের উপকারিতার উপর জোর দেয়। এই প্রাচীন অভ্যাসটি হজমশক্তি বাড়াতে, শরীরকে বিষমুক্ত করতে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। ঘি, যা মূলত মাখনের জলীয় অংশ ও কঠিন পদার্থ সরিয়ে তৈরি করা হয়, এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন (এ, ডি, ই, এবং কে) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। বিশেষ করে, এতে থাকা বিউটারিক অ্যাসিড (butyric acid) অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে, প্রদাহ কমাতে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যখন ঘি উষ্ণ জলের সাথে মিশিয়ে খালি পেটে পান করা হয়, তখন এটি হজমতন্ত্রের জন্য একটি প্রাকৃতিক পিচ্ছিলকারক হিসেবে কাজ করে। এটি মলত্যাগকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, এটি 'অগ্নি' বা হজমশক্তিকে উদ্দীপিত করে, যা খাদ্য হজম ও পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে। এই মিশ্রণটি শরীরের বর্জ্য পদার্থ ও বিষাক্ত টক্সিন বের করে দিতেও সাহায্য করে, যা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘিতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী চর্বি কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি তৃপ্তি বাড়িয়ে অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও ঘি উপকারী। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং উজ্জ্বলতা আনে। এছাড়াও, ঘি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মানসিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। জয়েন্টের স্বাস্থ্যও উন্নত হয়, কারণ ঘি জয়েন্টগুলোকে পিচ্ছিল রাখতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে, যা বাত বা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যায় আরাম দিতে পারে।

ঘি-জল পান করার সঠিক পদ্ধতি হলো সকালে খালি পেটে এক চা চামচ ঘি উষ্ণ জলে মিশিয়ে পান করা। এটি শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা শুরু করতে এবং সারাদিনের জন্য শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তবে, যেকোনো স্বাস্থ্য অভ্যাসের মতো, পরিমিতি বোধ অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত ঘি গ্রহণ করলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই, প্রতিদিন ১-২ চা চামচের বেশি ঘি না খাওয়াই শ্রেয়। স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসেবে এই প্রাচীন অভ্যাসটি গ্রহণ করলে তা সার্বিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

উৎসসমূহ

  • Thehealthsite.com

  • NDTV Food

  • NDTV

  • HealthShots

  • HerZindagi

  • Firstpost

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।