রিচার্ড লিঙ্কল্যাটারের নতুন চলচ্চিত্র 'নভেল ভেগ' (Nouvelle Vague) এর ট্রেলার প্রকাশিত হয়েছে, যা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সিনেমার প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই ছবিটি জ্যাঁ-লুক গোদার-এর কালজয়ী সৃষ্টি 'ব্রেথলেস' (Breathless) এবং ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে নির্মিত। আগামী ৩১শে অক্টোবর, ২০২৫-এ এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাবে এবং ১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ থেকে নেটফ্লিক্সেও দেখা যাবে।
এই চলচ্চিত্রে গোদার-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন গুইলামে মারবেক এবং জ্যাঁ সেবার্গের চরিত্রে রয়েছেন জোয়ি ডেউচ। ছবিটি মূলত 'ব্রেথলেস' নির্মাণের পেছনের গল্প এবং গোদার-এর চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও নিউ ওয়েভ আন্দোলনের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগগুলিকে তুলে ধরে। চলচ্চিত্রটি ১৯৫০-এর দশকের আমেজ ফুটিয়ে তোলার জন্য সাদাকালোয় চিত্রায়িত হয়েছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে এর প্রিমিয়ার হয়েছিল এবং সেখানে এটি ১১ মিনিটের স্ট্যান্ডিং ওভেশন লাভ করে। সমালোচকরা ছবিটিকে ক্লাসিক ফ্রেঞ্চ সিনেমার প্রতি একটি রোমান্টিক এবং অত্যন্ত সুচারুভাবে নির্মিত শ্রদ্ধা হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ আন্দোলন ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ফ্রান্সে এক নতুন ধারার সিনেমার জন্ম দিয়েছিল। এটি প্রচলিত চলচ্চিত্র নির্মাণ রীতির বিরুদ্ধে এক বিপ্লব ছিল, যেখানে পরীক্ষামূলক পদ্ধতি এবং ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির উপর জোর দেওয়া হত। জ্যাঁ-লুক গোদার, ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো এবং ক্লদ শাবরলের মতো পরিচালকরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে সিনেমার ভাষা বদলে দিয়েছিলেন। 'ব্রেথলেস' (১৯৬০) ছবিটি এই আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ, যা তার সাহসী সম্পাদনা, হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা এবং বাস্তবসম্মত চিত্রায়নের জন্য বিখ্যাত।
জোয়ি ডেউচ, যিনি 'নভেল ভেগ'-এ জ্যাঁ সেবার্গের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি এই চরিত্রের জন্য নিজের চুলও কেটেছিলেন এবং ফরাসি ভাষা শিখেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে সেবার্গের চরিত্রে অভিনয় করার সময় তিনি নিজেও কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিলেন, যা তাকে চরিত্রটির সঙ্গে আরও ভালোভাবে একাত্ম হতে সাহায্য করেছে। লিঙ্কল্যাটার এই ছবিটি তৈরির সময় ১৯৫৯ সালের প্যারিসের পরিবেশকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, যা ছবির সাদাকালো চিত্রগ্রহণ এবং পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমে স্পষ্ট।
'নভেল ভেগ' শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ কাহিনীর পুনর্নির্মাণই নয়, এটি সিনেমার প্রতি ভালোবাসা এবং সৃজনশীলতার এক উদযাপন। ছবিটি দর্শকদের ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের সেই সোনালী সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, যখন তরুণ পরিচালকরা প্রচলিত ধারা ভেঙে নতুন পথের সন্ধান করেছিলেন।