সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে "প্যানিক বাটন" নামক তথ্যচিত্র, যা কিরগিজস্তানের এক বিশাল দুর্নীতি কেলেঙ্কারির তদন্তের পরিণতি তুলে ধরেছে। সামারা সাগিনবায়েভার পরিচালনায় । এই ছবিতে সাংবাদিক আলি তকতাকুনভকে কেন্দ্র করে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে, যিনি একটি ৭০ কোটি ডলারের তহবিল তছরুপের ঘটনা ফাঁস করেছিলেন। তকতাকুনভের প্রতিবেদন প্রকাশের পর, তার হুইসেলব্লোয়ারকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর, তিনি ও তার স্ত্রী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। "প্যানিক বাটন" তথ্যচিত্রটি তাদের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিবরণ দেয়, যেখানে তারা কিরগিজস্তানে ফিরে আসার আগে পর্যন্ত তাদের পালানোর কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।
বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হওয়া এই তথ্যচিত্রটি, এবং প্রাগের ওয়ান ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভালেও প্রদর্শিত হয়েছে, কিরগিজস্তানে নাগরিক স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের বৃহত্তর প্রভাবকেও তুলে ধরেছে। এটি প্রতিকূল পরিবেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সাহসিকতার এক শক্তিশালী প্রমাণ। কিরগিজস্তানে দুর্নীতি একটি গভীর সমস্যা যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। ২০১৯ সালে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি উপলব্ধি সূচকে কিরগিজস্তান ১০০ এর মধ্যে ৩০ স্কোর নিয়ে ১২৬তম স্থানে ছিল। এই দুর্নীতি দেশটির শাসনব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর থেকে, স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর সরকারি চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা প্রায়শই হয়রানি, হুমকি এবং মামলার শিকার হন। আলি তকতাকুনভ নিজেও এই ধরনের অনলাইন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কাজের জন্য, তকতাকুনভকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক 'দুর্নীতি বিরোধী চ্যাম্পিয়ন' পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন প্রদান করেন। "প্যানিক বাটন" তথ্যচিত্রটি শুধু একটি দুর্নীতি কেলেঙ্কারির ঘটনাকেই তুলে ধরে না, বরং এটি কিরগিজস্তানের মতো দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলোকেও আলোকিত করে।
এটি দেখায় যে কীভাবে সত্য উন্মোচনের জন্য ব্যক্তিগত জীবনে ঝুঁকি নিতে হয় এবং এর ফলে কীভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে। তথ্যচিত্রটি এই বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করে যে, একটি পরিবারের ব্যক্তিগত জীবনের ত্যাগ স্বীকার করে জনস্বার্থ এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের অর্থ কী। এই তথ্যচিত্রটি কিরগিজস্তানের মতো দেশে গণতন্ত্র এবং বিচার ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা সম্পর্কে একটি সতর্কতামূলক গল্পও বটে, যেখানে বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা নেই।