সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নাসা বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছেন যে, সূর্যের কার্যকলাপ অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পূর্বের প্রত্যাশাগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই গবেষণাটি সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর শুরুতে 'দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স'-এ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে দেখা যাচ্ছে যে সূর্য ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। এটি ১৯৮০-এর দশক থেকে পরিলক্ষিত কার্যকলাপ হ্রাসের প্রবণতাকে উল্টে দিয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি মহাকাশে আবহাওয়ার ঘটনা, যেমন সৌর ঝড়, সৌর শিখা এবং করোনাল মাস ইজেকশন (CME) বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাসা সতর্ক করেছে যে এই পরিবর্তনগুলি মহাকাশযানের পরিচালনা এবং নভোচারীদের নিরাপত্তাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। মহাকাশের আবহাওয়া পৃথিবীর মানুষের কার্যকলাপকেও প্রভাবিত করতে পারে, বিদ্যুৎ গ্রিড, জিপিএস সিস্টেম এবং রেডিও যোগাযোগকে প্রভাবিত করে। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির (JPL) একজন মহাকাশ প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞানী এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক জেমি জাসিনস্কি এই প্রবণতার বিপরীতমুখী পরিবর্তনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সব লক্ষণই ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে সূর্য দীর্ঘস্থায়ী কম কার্যকলাপের একটি পর্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে। তাই এই প্রবণতা উল্টে যেতে দেখাটা ছিল একটি বিস্ময়। সূর্য ধীরে ধীরে জেগে উঠছে।”
১৯৮০-এর দশক থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সৌর কার্যকলাপ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছিল, যা রেকর্ড করা সবচেয়ে দুর্বল পর্যায় ছিল। ২০০৮ সালের পর থেকে, গবেষকরা সৌর আচরণের একটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন, যা এই প্রবণতার একটি বিপরীতমুখী পরিবর্তন নির্দেশ করে। পৃথিবী বর্তমানে সৌরচক্র ২৫-এর মধ্যে রয়েছে, যা ডিসেম্বর ২০১৯-এ শুরু হয়েছিল। পূর্ববর্তী সৌরচক্র, সৌরচক্র ২৪, এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) অনুমান করে যে সৌরচক্র ২৬ জানুয়ারি ২০২৯ থেকে ডিসেম্বর ২০৩২-এর মধ্যে শুরু হতে পারে।
এই অপ্রত্যাশিত সৌর কার্যকলাপ বৃদ্ধি সূর্যের আচরণের গতিশীল প্রকৃতি এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর প্রযুক্তির উপর এর সম্ভাব্য প্রভাবকে তুলে ধরে। এই পরিবর্তনগুলি মহাকাশ গবেষণা এবং পৃথিবীর প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, যা ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযান এবং পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।