মহাকাশের আবহাওয়ার ইতিহাসে মে ২০২৫ একটি যুগান্তকারী মাস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই সময়েই NASA-এর PUNCH মহাকাশযানটি প্রথমবারের মতো সৌর বায়ুর সম্পূর্ণ গতিপথ সফলভাবে পর্যবেক্ষণ ও অনুসরণ করতে সক্ষম হয়। এই সৌর বায়ু হলো সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে নির্গত 'উত্তাল স্রোত এবং জেটগুলির' একটি প্রবাহ, যা আমাদের গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছায়। অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের গতিশীলতা বোঝার জন্য এই অর্জনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই প্রবাহ বিপুল পরিমাণ শক্তি বহন করে এবং মহাকাশীয় পরিবেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
এই যুগান্তকারী মিশনের জন্য চারটি স্যুটকেস আকারের উপগ্রহের একটি কনস্টেলেশন তৈরি করা হয়েছিল। এগুলি ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্সেস বেস থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটে উৎক্ষেপণ করা হয়। উপগ্রহগুলি নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথে (Low Earth Orbit) স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তারা একটি একক 'ভার্চুয়াল যন্ত্র' হিসাবে কাজ করে। সৌর বায়ুর কণাগুলি প্রায় ১৪৯.১৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে মাত্র একদিনের মধ্যে পৃথিবীতে পৌঁছায়, যার গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় এক মিলিয়ন মাইলেরও বেশি। এই প্রবাহের তীব্রতা পরদিন কলোরাডোতে দেখা শক্তিশালী মেরুজ্যোতি (Aurora) দ্বারা নিশ্চিত হয়েছিল, যা এই ঘটনার বিশালতা প্রমাণ করে।
সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SwRI)-এর PUNCH মিশনের প্রধান গবেষক ডক্টর ক্রেইগ ডিফরেস্ট ১৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ভারতের তিরুবনন্তপুরমে একটি জনসমক্ষে বক্তৃতায় এই তথ্যগুলি উপস্থাপন করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে PUNCH (Polarimeter to Unify the Corona and Heliosphere) মিশনের মূল লক্ষ্য হলো সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, অর্থাৎ করোনা, কীভাবে সৌর বায়ুতে রূপান্তরিত হয় সে সম্পর্কে অভূতপূর্ব ধারণা দেওয়া। উৎস থেকে শুরু করে পৃথিবীতে এর প্রভাব পর্যন্ত এই ঘটনাটি ট্র্যাক করার ক্ষমতা মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ঐতিহাসিকভাবে মহাকাশের আবহাওয়া বিদ্যুৎ গ্রিড সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, তাই এই পূর্বাভাস ক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি।
PUNCH মিশনটি ন্যূনতম দুই বছর ধরে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই মিশনে আলোর পোলারাইজেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াটির ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা হয়, যা একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। উদাহরণস্বরূপ, প্রাথমিক পরীক্ষা চলাকালীন, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে, WFI-2 যন্ত্রটি কণার গতিবিধি ম্যাপ করার জন্য পোলারাইজেশন ব্যবহার করে ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করেছিল। বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন যে PUNCH, IMAP-এর মতো অন্যান্য মিশনের সাথে একত্রে কাজ করে, করোনা থেকে হেলিওস্ফিয়ারের সীমানা পর্যন্ত বিলিয়ন অর্ডারের স্কেল জুড়ে ডেটা সরবরাহ করবে। এই যুগান্তকারী ডেটা সংগ্রহ মহাকাশের প্রভাবগুলির জন্য কেবল নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষণ থেকে সরে এসে সচেতন প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে যেতে মানবজাতিকে সহায়তা করবে, যার ফলে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিপর্যয়গুলি এড়ানো সম্ভব হবে।