সিমুলেশন তত্ত্বের গাণিতিক অবসান: বাস্তবতার ঊর্ধ্বে ডিজিটাল মকাবেলা
সম্পাদনা করেছেন: Irena I
বহুদিন ধরে মানুষের মনে এই ধারণাটি কৌতূহল জাগিয়েছে যে আমাদের পরিচিত জগৎ হয়তো কোনো বিশাল সুপারকম্পিউটারের কোড মাত্র, যেমনটি 'দ্য ম্যাট্রিক্স' চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছিল। তবে, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউবিসি) ওকানাগানের পদার্থবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা এই ধারণাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ডক্টর মির ফাইজাল এবং তাঁর আন্তর্জাতিক গবেষক দল প্রমাণ করেছেন যে মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামো ডিজিটাল প্রতিলিপি হওয়ার ধারণাকে প্রতিরোধ করে।
এই গবেষণাটি 'জার্নাল অফ হলোোগ্রাফি অ্যাপ্লিকেশনস ইন ফিজিক্স'-এ প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে কোনো কম্পিউটার, এমনকি কোয়ান্টাম গণনা ব্যবহার করলেও, মহাবিশ্বের মৌলিক নিয়মগুলিকে সম্পূর্ণরূপে মডেল করতে সক্ষম হবে না। এই সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি ছিল গণিতের শক্তিশালী উপপাদ্য, বিশেষত কার্ট গোডেলের অসম্পূর্ণতা উপপাদ্য। গোডেল দেখিয়েছিলেন যে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্যে এমন কিছু বিবৃতি সর্বদা থাকবে যা সত্য হলেও সেই ব্যবস্থার নিজস্ব নিয়মাবলীর দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এর অর্থ হলো, একটি ব্যবস্থা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে পারে না।
যদি আমাদের জগৎ অনুকরণযোগ্য হতো, তবে এর ফলে অসীম সংখ্যক বংশধর সিমুলেশন তৈরি হতো, যার অর্থ আমাদের বাস্তবতা মূল (Original) হওয়ার সম্ভাবনা হতো ট্রিলিয়নে মাত্র এক। এই গবেষণাটি পূর্বে কেবল দার্শনিক আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, যা বিজ্ঞান দ্বারা সহজে যাচাইযোগ্য ছিল না। আধুনিক পদার্থবিদ্যা, বিশেষত কোয়ান্টাম মহাকর্ষের ধারণা অনুযায়ী, স্থান ও কাল হয়তো মৌলিক সত্তা নয়, বরং গভীরতর কোনো তথ্যগত কাঠামোর উদ্ভূত বৈশিষ্ট্য।
গবেষণার অন্যতম লেখক ডক্টর লরেন্স এম. ক্রাউস মন্তব্য করেছেন যে, "যেকোনো সিমুলেশনে, অনুকরণ করা জগৎ তার নিজস্ব প্রোগ্রামের বন্দী থাকে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা 'আইন-বহির্ভূত', অথবা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, অ্যালগরিদমিক উপায়ে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করার জন্য অপরিমেয়ভাবে জটিল।" এই গবেষণা নিশ্চিত করে যে আমাদের বাস্তবতা ডিজিটাল অনুকরণে হ্রাস করা যায় না, এবং এর জটিলতা আধুনিক গণনা মডেলগুলির ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়।
ইউবিসি ওকানাগানের গবেষকরা এই ধারণাকে নিছক অনুমান থেকে সরিয়ে এনে কঠোর বৈজ্ঞানিক যাচাইয়ের আওতায় এনেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন যে বাস্তবতার মৌলিক প্রকৃতি অ্যালগরিদমকে অতিক্রম করে এমন বোধগম্যতার উপর নির্ভরশীল। এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়, যেখানে কিছু মৌলিক সত্য গণনার নাগালের বাইরে অবস্থান করে। এই গভীর কাঠামোটি এমন এক 'প্লাটোনিক ক্ষেত্র' থেকে উদ্ভূত, যা স্থান-কালের জন্ম দেয়, এবং এই ক্ষেত্রটিই গণনার সীমার বাইরে থাকা 'নন-অ্যালগরিদমিক' উপলব্ধির দাবি রাখে।
উৎসসমূহ
Рамблер
Том 122, № 3-4 (2025) - Pisʹma v žurnal êksperimentalʹnoj i teoretičeskoj fiziki
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
