স্বাস্থ্যসেবায় অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা
সম্পাদনা করেছেন: Irena I
২০২৫ সাল নাগাদ স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে দুটি উদীয়মান প্রযুক্তি—অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স (OI) এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং—গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই প্রযুক্তির সমন্বয় চিকিৎসা গবেষণা, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পদ্ধতিকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স পরীক্ষাগারে তৈরি ত্রিমাত্রিক কোষগুচ্ছ বা অঙ্গের ক্ষুদ্র সংস্করণ ব্যবহার করে, যা জৈবিক কম্পিউটার হিসেবে কাজ করতে পারে এবং সিলিকন-ভিত্তিক ব্যবস্থার তুলনায় উচ্চ প্রক্রিয়াকরণ গতি ও শক্তির দক্ষতা প্রদানে সক্ষম।
অন্যদিকে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নীতি ব্যবহার করে জটিল গণনা সম্পাদনের মাধ্যমে ওষুধ আবিষ্কার এবং জিনোমিক্সের মতো ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির আর্থিক প্রভাব উল্লেখযোগ্য; পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বাজারের মূল্য ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে জড়িত প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে আইবিএম (IBM), টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS), এবং ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক (Cleveland Clinic)।
বিশেষত, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক তাদের কোয়ান্টাম ইনোভেশন ক্যাটালাইজার প্রোগ্রামের নতুন ধাপ শুরু করেছে, যা স্টার্টআপ কোম্পানিগুলিকে স্বাস্থ্যসেবা ও জীবন বিজ্ঞানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রয়োগের সুযোগ দিচ্ছে। এই ১২ মাসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের প্রধান ক্যাম্পাসে অবস্থিত আইবিএম কোয়ান্টাম সিস্টেম ওয়ান (IBM Quantum System One)-এ সরাসরি প্রবেশাধিকার লাভ করে, যা স্বাস্থ্যসেবা ও জীবন বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য উৎসর্গীকৃত বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার। গবেষকরা মস্তিষ্কের অর্গানয়েডকে জীবন্ত প্রসেসর হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখছেন, যা বর্তমান এআই মডেলগুলির তুলনায় অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে জটিল সমান্তরাল গণনা সম্পাদন করতে পারে।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্সের গবেষণায় ১৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যার লক্ষ্য জৈব-কম্পিউটিং গবেষণায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করা। এই জৈব-কম্পিউটারগুলি রোগীর নিজস্ব কোষ থেকে তৈরি হলে, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বৈশ্বিক বাজারও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে; ২০২৫ সালে এর মূল্য ছিল ২৬৫.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১,৩২৪.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে, যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) ৩৭.৯%।
এই প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক উদাহরণ হলো ভারত। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) এবং আইবিএম (IBM) অন্ধ্র প্রদেশের অমরাবতীতে নির্মিতব্য দেশের প্রথম কোয়ান্টাম ভ্যালি টেক পার্কে ভারতের বৃহত্তম কোয়ান্টাম কম্পিউটার স্থাপনের জন্য অংশীদারিত্ব করেছে। এই পার্কে আইবিএম কোয়ান্টাম সিস্টেম টু (IBM Quantum System Two) স্থাপন করা হবে, যাতে ১৫৬-কিউবিট হেরন প্রসেসর থাকবে, যা ভারতে বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসেবে বিবেচিত। এই উদ্যোগটি ভারতের জাতীয় কোয়ান্টাম মিশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য ভারতকে কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এবং আইবিএম-এর দশ বছরের অংশীদারিত্বের অধীনে, কোয়ান্টাম ইনোভেশন ক্যাটালাইজার প্রোগ্রামের বিজয়ী সংস্থাগুলি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক-আইবিএম ডিসকভারি অ্যাক্সিলারেটর দলের গবেষকদের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ পায়। যদিও এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি আশাব্যঞ্জক, ডেটা গোপনীয়তা এবং সম্মতি সংক্রান্ত নৈতিক প্রশ্নগুলি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পাশাপাশি অনুসন্ধানের দাবি রাখে। কোয়ান্টাম এবং অর্গানয়েড প্রযুক্তির এই সম্মিলিত যাত্রা স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে চলেছে।
উৎসসমূহ
Techloy
Amaravati Quantum Valley - Wikipedia
Cleveland Clinic Launches New Round of Quantum Innovation Catalyzer Program
1.3 Billion Quantum Computing in Healthcare Market Poised for 37.9% CAGR Growth | MarketsandMarkets™
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
