সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল কোয়ান্টাম পরিমাপের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধন করেছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায়, তারা কার্যকরভাবে অনিশ্চয়তাকে পুনর্বিন্যাস করার একটি অভিনব পদ্ধতি প্রদর্শন করেছেন। এর ফলে একটি কণার অবস্থান এবং ভরবেগ উভয়ই একই সাথে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে, যা পূর্বে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল।
ঐতিহ্যগতভাবে, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি একটি কণার অবস্থান এবং ভরবেগ একই সাথে নির্ভুলভাবে জানার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এই নীতিটি অতি-সংবেদনশীল কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির বিকাশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে, নতুন পদ্ধতিটি অনিশ্চয়তাকে পরিমাপের কম গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিতে সরিয়ে নিয়ে গেছে, যার ফলে অবস্থান এবং ভরবেগ উভয় ক্ষেত্রেই নির্ভুলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গবেষণাটি কোয়ান্টাম সেন্সর প্রযুক্তির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
গবেষকরা 'গ্রিড স্টেট' (grid states) ব্যবহার করেছেন, যা ত্রুটি-সংশোধিত কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জন্য তৈরি একটি বিশেষ কোয়ান্টাম অবস্থা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা ন্যানোমিটারের ভগ্নাংশ (প্রায় অর্ধ ন্যানোমিটার) পর্যন্ত অনিশ্চয়তা পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তারা ইয়োক্টোনিউটন (yoctonewtons) পরিসরের ক্ষুদ্রতম বল সনাক্ত করতেও সক্ষম হয়েছেন, যা এক ট্রিলিয়নেরও বেশি ভাগের এক ভাগ নিউটন। এই সংবেদনশীলতা প্রায় ৩০টি অক্সিজেন অণুর ওজনের সমান বল সনাক্ত করার ক্ষমতার সঙ্গে তুলনীয়। এই অভূতপূর্ব সংবেদনশীলতা পূর্বে প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হত।
এই অগ্রগতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। অত্যন্ত ক্ষুদ্র সংকেতগুলিকে উচ্চ নির্ভুলতার সাথে পরিমাপ করার ক্ষমতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলি, যা সংঘর্ষরত ব্ল্যাক হোলের মতো মহাজাগতিক ঘটনা সনাক্ত করে, তারা উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হতে পারে। এছাড়াও, এটি নেভিগেশন, চিকিৎসা চিত্রগ্রহণ, পদার্থ পর্যবেক্ষণ এবং জ্যোতির্বিদ্যার জন্য অতি-সংবেদনশীল কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির বিকাশে সহায়তা করতে পারে। এই সেন্সরগুলি পারমাণবিক স্তরে পদার্থের বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করতে এবং মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্য উন্মোচন করতে সহায়ক হবে।
এই গবেষণা কোয়ান্টাম পরিমাপ বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ভবিষ্যতের সেন্সিং প্রযুক্তির জন্য একটি নতুন কাঠামো সরবরাহ করে, যা অত্যন্ত ক্ষুদ্র সংকেত সনাক্তকরণের জন্য অপরিহার্য। যদিও এটি বর্তমানে একটি পদার্থবিদ্যা পরীক্ষাগারের মধ্যে সীমাবদ্ধ, এই পরীক্ষাটি অতি-সংবেদনশীল কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির সম্ভাবনা প্রদর্শন করে, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিস্তৃত অ্যাপ্লিকেশন খুঁজে পেতে পারে।
এই গবেষণাটি সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষামূলক গবেষক এবং আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাকুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিকদের মধ্যে একটি সহযোগিতা ছিল। এই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে, যা আবিষ্কারের গতি বাড়ায় এবং বিশ্বব্যাপী কোয়ান্টাম গবেষণা সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করে।