আমরা যে দেয়ালকে কঠিন ও দুর্ভেদ্য মনে করি, তা আসলে পরমাণু দিয়ে গঠিত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পরমাণুর বেশিরভাগ অংশই ফাঁকা। তাহলে কেন আমরা দেয়ালের ভেতর দিয়ে যেতে পারি না? এর পেছনে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক নীতি, বিশেষ করে ইলেকট্রন মেঘের বিকর্ষণ এবং পাউলি বর্জন নীতি।
পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস, যা প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে তৈরি। এর চারপাশে ঘুরতে থাকে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন। যখন দুটি পরমাণু একে অপরের কাছাকাছি আসে, তখন তাদের ইলেকট্রন মেঘ, যা ইলেকট্রনের সম্ভাব্য অবস্থানের একটি অঞ্চল, একে অপরের থেকে বিকর্ষিত হয়। এটি ঘটে কারণ ইলেকট্রনগুলো ঋণাত্মক চার্জযুক্ত এবং সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।
এই বিকর্ষণের ফলেই ইলেকট্রন মেঘগুলো একে অপরের সাথে সহজে মিশে যেতে পারে না, যা একটি প্রতিরোধক দেয়াল তৈরি করে। এটিকে দুটি চুম্বকের সমমেরু একে অপরকে দূরে ঠেলে দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এই দুর্ভেদ্যতা আরও দৃঢ় হয় পাউলি বর্জন নীতির মাধ্যমে। এটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার একটি নীতি যা বলে যে, দুটি অভিন্ন ফার্মিয়ন (যেমন ইলেকট্রন) একই সময়ে একই কোয়ান্টাম অবস্থায় থাকতে পারে না। সহজ ভাষায়, ভিন্ন পরমাণুর ইলেকট্রন একই সময়ে একই স্থানে থাকতে পারে না।
যদিও কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের মতো কিছু ঘটনা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সম্ভাবনার মাধ্যমে কণাদের বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে, কিন্তু একটি মানবদেহ, যা অসংখ্য পরমাণু দিয়ে গঠিত, তার পক্ষে দেয়াল ভেদ করে টানেলিংয়ের মাধ্যমে যাওয়ার সম্ভাবনা এতই ক্ষীণ যে তা কার্যত অসম্ভব।
এই নীতিগুলো কেবল আমাদের দেয়াল ভেদ করতে বাধা দেয় তাই নয়, বরং পদার্থের স্থিতিশীলতা এবং এর বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, কঠিন পদার্থের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক ধর্মগুলো পাউলি বর্জন নীতির প্রত্যক্ষ ফল। এই নিয়মগুলো নিশ্চিত করে যে পরমাণুগুলো তাদের নিজস্ব কাঠামো বজায় রাখে এবং একে অপরের সাথে মিশে যায় না, যা আমাদের পরিচিত জগতের কঠিন বস্তুর বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
যদিও পরমাণুর বেশিরভাগ অংশই ফাঁকা, ইলেকট্রন মেঘের মধ্যেকার শক্তিশালী বিকর্ষণ এবং পাউলি বর্জন নীতির সম্মিলিত প্রভাব আমাদের চারপাশের বস্তুকে দুর্ভেদ্য ও কঠিন করে তোলে। এই মৌলিক নীতিগুলোই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পদার্থের যে দৃঢ়তা অনুভব করি, তা নিশ্চিত করে।