স্প্যানিশ-জার্মান গবেষকদের প্রস্তাবিত পঞ্চম মাত্রা মডেল: ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে সংযোগ

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গভীর রহস্য, ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি উদঘাটনের লক্ষ্যে স্পেন এবং জার্মানির একদল গবেষক একটি তাত্ত্বিক কাঠামো উপস্থাপন করেছেন। এই গবেষণাটি ১৯৯৯ সালে প্রথম প্রস্তাবিত 'বিকৃত অতিরিক্ত মাত্রা' (Warped Extra Dimension বা WED) ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই মডেলটি ফার্মিয়ন কণার ভরকে একটি অতিরিক্ত স্থানে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, অথচ স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে না। দ্য ইউরোপীয় ফিজিক্যাল জার্নাল সি-তে প্রকাশিত এই কাজটি নভেম্বর ২০২৫-এর আশেপাশে গণমাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণ করে।

এই তাত্ত্বিক কাজের মূল ভিত্তি হলো মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের মূল উপাদান—ফার্মিয়ন কণাগুলোর গাণিতিক পুনর্গঠন। গবেষকরা প্রস্তাব করেছেন যে নির্দিষ্ট কিছু ফার্মিয়নের ভর একটি অতিরিক্ত স্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে, যা একটি অনুমিত 'ডার্ক সেক্টর' গঠন করে এবং মহাবিশ্বের মোট পদার্থের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ জুড়ে থাকা ডার্ক ম্যাটার হিসেবে কাজ করে। ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের কাঠামোকে মহাকর্ষীয়ভাবে ধরে রাখতে অপরিহার্য হলেও, এটি দৃশ্যমান কণার সাথে মিথস্ক্রিয়া করে না, যা এর রহস্যময় প্রকৃতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মধ্যে ডার্ক ম্যাটারের জন্য কোনো কার্যকর প্রার্থী না পাওয়ায়, গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে বর্তমান কাঠামোর বাইরে নতুন পদার্থবিদ্যার প্রয়োজন রয়েছে।

এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি পদার্থবিজ্ঞানের আরেকটি অমীমাংসিত সমস্যা—হিগস বোসনের প্রত্যাশিত ভরের তুলনায় তার অস্বাভাবিক কম ভর (হায়ারার্কি সমস্যা)—সমাধানেও একটি সম্ভাব্য সমাধান প্রদান করে। WED মডেলটি মূলত ১৯৯৯ সালে ইউভাল গ্রসম্যান এবং ম্যাথিয়াস নিউবার্ট কর্তৃক প্রস্তাবিত ধারণার একটি পরিমার্জন, যা অতিরিক্ত মাত্রার জ্যামিতির মাধ্যমে মৌলিক কণার ভরের রহস্যময় বিন্যাস ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিল। এই নতুন গবেষণায়, গবেষকরা দেখিয়েছেন কীভাবে ফার্মিয়ন কণাগুলো কোয়ান্টাম পোর্টালের মাধ্যমে এই বিকৃত পঞ্চম মাত্রায় প্রবেশ করতে পারে, যা 'ফার্মিওনিক ডার্ক ম্যাটার' তৈরি করে।

এই তাত্ত্বিক প্রস্তাবনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পরীক্ষামূলক যাচাইকরণ, যা বর্তমানে গবেষণার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। গবেষকরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকারী যন্ত্রগুলো এই মাত্রাগত মিথস্ক্রিয়ার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরীক্ষা করার জন্য সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক পথ হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রা বিদ্যমান থাকলে, মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলো সাধারণ তরঙ্গ থেকে ভিন্নভাবে স্থান-কালকে প্রসারিত বা সংকুচিত করবে, যা শনাক্ত করা সম্ভব। কিছু তাত্ত্বিক মডেল, যেমন র্যান্ডাল-সুন্ড্রাম (RS) মডেল, যেখানে মহাবিশ্ব একটি পাঁচ-মাত্রিক অ্যান্টি-ডি সিটার স্পেস এবং কণাগুলো একটি ব্রাne-এ সীমাবদ্ধ, এই ধারণার জন্ম দিয়েছে।

যদি অতিরিক্ত মাত্রাগুলো বড় হয়, তবে মহাকর্ষ ক্ষেত্রের একটি অংশ সেই অতিরিক্ত মাত্রায় 'লিক' করতে পারে, যার ফলে LIGO এবং VIRGO-এর মতো ডিটেক্টরে আসা মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলো প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল হতে পারে। যদিও কিছু পূর্ববর্তী গবেষণায় নিউট্রন তারার সংঘর্ষের ডেটা ব্যবহার করে অতিরিক্ত মাত্রার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এই নতুন WED মডেলের নির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ভবিষ্যতের উন্নত মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকারী যন্ত্র, যেমন পরিকল্পনাধীন KAGRA এবং IndIGO সুবিধা, দ্বারা পরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই গবেষকদের মতে, যদি একটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকারী যন্ত্র এই নির্দিষ্ট স্বাক্ষরটি সনাক্ত করতে পারে, তবে এটি ডার্ক ম্যাটার খুঁজে পাওয়ার চেয়েও বড় আবিষ্কার হবে—এটি অন্য একটি মাত্রার পরীক্ষামূলক প্রমাণ হবে, যা বাস্তবতার মৌলিক ধারণাকে আমূল পরিবর্তন করবে।

উৎসসমূহ

  • MARCA

  • La Razón

  • El Cronista

  • Popular Mechanics

  • Debate

  • Colombia.com

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।