পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা, যা এতদিন পর্যন্ত বিশৃঙ্খল বলে মনে করা হত, তা আসলে এক গভীর গাণিতিক বিন্যাস অনুসরণ করে। সম্প্রতি 'আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স' জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শন লাভজয় এবং চিলির পন্টিফিকাল ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফ্যাব্রিচ ল্যাম্বার্টের মতো আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তারা ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার বিভাজন রেখাগুলিকে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এই ঘটনাগুলি নিয়মিত বিরতিতে ঘটে না, বরং একটি বহুফ্র্যাক্টাল (multifractal) বিন্যাস অনুসরণ করে। এর অর্থ হল, পৃথিবীর ইতিহাসে স্থিতিশীল সময়কালের পাশাপাশি হঠাৎ বড় ধরনের ঘটনাগুলিরও একটি নির্দিষ্ট বিন্যাস রয়েছে।
অধ্যাপক স্পিরিডোনভ ব্যাখ্যা করেছেন যে, ভূতাত্ত্বিক সময়সীমাগুলি দেখতে সরলরৈখিক মনে হলেও, এগুলি আসলে এক বিশৃঙ্খল অথচ সুসংগঠিত কাহিনীর অংশ। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যা এতদিন পর্যন্ত এলোমেলো গোলমাল বলে মনে করা হত, তা আসলে গ্রহের পরিবর্তন এবং তার সম্ভাব্য বিস্তার বোঝার মূল চাবিকাঠি। গবেষকদের মতে, এই ঘটনাগুলির মধ্যেকার ব্যবধান একটি বহুফ্র্যাক্টাল যুক্তি অনুসরণ করে, যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীলতার বিস্তারকে নির্দেশ করে। এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে পৃথিবীর ইতিহাস এলোমেলো নয়, বরং একাধিক স্কেলে সুসংগঠিত।
এই জটিল বিন্যাসকে মডেল করার জন্য, গবেষকরা 'কম্পাউন্ড মাল্টিফ্র্যাক্টাল-পয়জন প্রসেস' (compound multifractal-Poisson process) নামে একটি নতুন গাণিতিক কাঠামো তৈরি করেছেন। এই মডেলটি পৃথিবীর সিস্টেমের পরিবর্তনগুলিকে ক্লাস্টারের মধ্যে ক্লাস্টার হিসাবে চিত্রিত করে, যা ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলির একটি সূক্ষ্মতর ধারণা প্রদান করে। গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে, পৃথিবীর 'আউটার টাইম স্কেল' (outer time scale) অর্থাৎ গ্রহের সম্পূর্ণ পরিবর্তনশীলতা ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সময়কাল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর বা তার বেশি। এর অর্থ হল, স্বল্প সময়ের গবেষণাগুলি গুরুত্বপূর্ণ চরম ঘটনাগুলি মিস করতে পারে, বিশেষত যেহেতু মানব ইতিহাস কেবল একটি শান্ত সাম্প্রতিক সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এই অন্তর্দৃষ্টি পৃথিবীর অতীত সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও গভীর করে এবং ভবিষ্যতের গ্রহীয় পরিবর্তনগুলির পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত করে। বহুফ্র্যাক্টাল প্রকৃতির ঘটনাগুলি চিহ্নিত করার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের ভূতাত্ত্বিক ঘটনাগুলির পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আরও সঠিক মডেল তৈরি করতে পারবেন। এই গবেষণায় অধ্যাপক শন লাভজয় (ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ফ্যাব্রিচ ল্যাম্বার্ট (পন্টিফিকাল ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, চিলি) এবং অধ্যাপক স্পিরিডোনভ (ভিলনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়) সহ বিভিন্ন দেশের গবেষকরা যুক্ত ছিলেন।