কোয়ান্টাম বায়োলজিতে যুগান্তকারী অগ্রগতি: শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের অভূতপূর্ব সাফল্য

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

জীববিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সমন্বয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। এই গবেষণার ফলাফল নেচার (Nature) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তারা সামুদ্রিক জীব, যেমন জেলিফিশ এবং প্রবাল থেকে প্রাপ্ত ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিনকে কার্যকরী 'বায়োকিউবিট'-এ রূপান্তরিত করেছেন। এই বায়োকিউবিটগুলি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের 'সুপারপজিশন' নীতি ব্যবহার করে একই সাথে একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে, যা প্রচলিত কম্পিউটারের 'বিট'-এর থেকে ভিন্ন। এই অগ্রগতি কোষের অভ্যন্তরীণ সূক্ষ্ম জগৎ অনুসন্ধানে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং জীবন্ত সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আমূল পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।

পূর্বে জীবন্ত কোষে কিউবিটের ব্যবহার নির্দিষ্ট পরিবেশগত অবস্থার উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি বিশেষ মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেছেন যা লেজার আলোর মাধ্যমে প্রোটিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। তারা বিশুদ্ধ প্রোটিন, মানব গালের কোষ এবং ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। যদিও প্রোটিনগুলি প্রায় ১৬ মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য কিউবিট হিসাবে কাজ করেছে – যা অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় কম সময় – এটি জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য পরিমাপের প্রথম ঘটনা। এই গবেষণা কোয়ান্টাম বায়োলজি এবং নতুন বায়োটেকনোলজি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের গবেষণার পথ প্রশস্ত করেছে।

এই বায়োকিউবিটগুলি কেবল জীবন্ত সিস্টেমে কোয়ান্টাম সেন্সিংয়ের নতুন উপায়ই সক্ষম করে না, বরং কোয়ান্টাম উপাদান নকশার একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিও উপস্থাপন করে। এই অগ্রগতি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, যেমন ন্যানোস্কেল এমআরআই (MRI) উন্নত করা এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায় সনাক্তকরণে সহায়তা করা। কোয়ান্টাম বায়োলজি একটি উদীয়মান ক্ষেত্র যা জীবন্ত সিস্টেমে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রভাব অন্বেষণ করে এবং এর সম্ভাব্য প্রয়োগগুলি বায়োমেডিকেল সেন্সিং, নির্ভুল চিকিৎসা এবং ঔষধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

এই গবেষণা বিজ্ঞানীদের জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরের কোয়ান্টাম জগৎকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এবং নতুন প্রজন্মের কোয়ান্টাম প্রযুক্তি বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই অগ্রগতিগুলি জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে কোয়ান্টাম সেন্সর তৈরি করার সম্ভাবনা উন্মোচন করে, যা পূর্বে অসম্ভব বলে মনে করা হত। এই অগ্রণী কাজটি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্গগ্রেন সেন্টার ফর কোয়ান্টাম বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিন (Berggren Center for Quantum Biology and Medicine) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমর্থিত হয়েছিল, যা ২১ মিলিয়ন ডলারের উদার অনুদানের ফল।

উৎসসমূহ

  • Рамблер

  • Новая газета

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।