কোরনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যেখানে অতিদ্রুত, নিম্ন-কম্পাঙ্কের ইনফ্রারেড আলোর স্পন্দন ব্যবহার করে পদার্থের পারমাণবিক স্তরে প্রসারণ ও সংকোচন ঘটানো সম্ভব। এই গবেষণাটি গত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স (Physical Review Letters) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে পদার্থের ল্যাটিসের মধ্যে দ্রুত পারমাণবিক-স্কেলে প্রসারণ ও সংকোচন সৃষ্টি করা যায়, যা পদার্থের ইলেকট্রনিক, চৌম্বকীয় বা আলোকীয় বৈশিষ্ট্যগুলিকে দ্রুত চালু বা বন্ধ করার সম্ভাবনা উন্মোচন করে।
এই গবেষণার সহ-নেতৃত্বে ছিলেন জ্যাকব গোলউইটজার (Jakob Gollwitzer) এবং জেফরি ক্যারেট (Jeffrey Kaaret)। তাদের সাথে সহযোগী অধ্যাপক নিকোল বেনেডেক (Nicole Benedek) এবং আন্দ্রেজ সিঙ্গার (Andrej Singer) যুক্ত ছিলেন। তারা মূলত যান্ত্রিক উপায়ে পদার্থের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আলোর মাধ্যমে পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের উপর আলোকপাত করেছেন, যা তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত একটি ক্ষেত্র। অধ্যাপক বেনেডেক তাত্ত্বিক গণনার মাধ্যমে সর্বোত্তম আলোর কম্পাঙ্ক এবং পরীক্ষামূলক প্যারামিটারগুলি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা পদার্থের মধ্যে অস্থায়ী বা 'ডাইনামিক' স্ট্রেইন তৈরি করতে সক্ষম, যা সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, যা সাধারণ বা 'স্ট্যাটিক' স্ট্রেইনের থেকে ভিন্ন।
গবেষণায় ল্যান্থানাম অ্যালুমিনেট (Lanthanum aluminate) নামক একটি সরল পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছিল, যা এই ধরনের আলোর প্রভাব অধ্যয়নের জন্য আদর্শ। গবেষকরা টেরা হার্টজ (terahertz) আলোর পিকোসিকন্ড (picosecond) বার্স্ট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পারমাণবিক গতিকে উত্তেজিত করেন, যার ফলে ল্যাটিসের দ্রুত প্রসারণ ঘটে। এই প্রক্রিয়া কেবল কাঙ্ক্ষিত স্ট্রেইনই তৈরি করেনি, বরং পদার্থের স্ফটিক কাঠামোকেও স্থায়ীভাবে উন্নত করেছে, যা পদার্থটিকে আরও সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
এই আবিষ্কার আলোর মাধ্যমে পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। এর ফলে অতিদ্রুত সুইচ, পরিবর্তনশীল সুপারকন্ডাক্টর এবং ডাইনামিক সেন্সরের মতো প্রযুক্তির অগ্রগতি সাধিত হতে পারে। জটিল অক্সাইড পদার্থের সাথে আলোর মিথস্ক্রিয়া বোঝার মাধ্যমে গবেষকরা প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে পদার্থের নতুন বৈশিষ্ট্যগুলি অন্বেষণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই গবেষণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি'র অফিস অফ বেসিক এনার্জি সায়েন্সেস এবং কর্নেল সেন্টার ফর মেটেরিয়ালস রিসার্চ (Cornell Center for Materials Research) থেকে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (National Science Foundation) এর MRSEC প্রোগ্রামের অর্থায়নে সমর্থিত হয়েছে।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) কর্তৃক সমর্থিত MRSEC প্রোগ্রামগুলি উচ্চ-মানের আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা এবং শিক্ষাকে উৎসাহিত করে, যা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এই কেন্দ্রগুলি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প খাতের মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের STEM কর্মশক্তি বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। এই গবেষণার ফলাফলগুলি পদার্থের উপর আলোর প্রভাব নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। টেরা হার্টজ (terahertz) আলোর ব্যবহার পদার্থবিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ এই কম্পাঙ্কের আলো বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রনিক, চৌম্বকীয় এবং আলোকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে উন্নত সেন্সর, দ্রুতগতির সুইচ এবং নতুন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।