মহাবিশ্বের প্রকৃতি নিয়ে চলমান বিতর্ককে নিছক জল্পনা-কল্পনার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক যুক্তি সম্প্রতি সামনে এসেছে। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইন ওকানাগান-এর গবেষক দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ডক্টর মির ফাইজাল, একটি গাণিতিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যা আমাদের এই মহাবিশ্ব একটি গণনাভিত্তিক সিমুলেশন হওয়ার সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। এই যুগান্তকারী কাজটি “জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড হলোগ্রাফি ইন ফিজিক্স”-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
এই গবেষণা দলে ডক্টর লরেন্স ক্রাউস, ডক্টর আরশিদ শাবির এবং ডক্টর ফ্রান্সেসকো মারিনো-ও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তারা তাদের প্রমাণের ভিত্তি হিসেবে মৌলিক গাণিতিক উপপাদ্য, বিশেষত গোডেলের অসম্পূর্ণতা উপপাদ্যকে ব্যবহার করেন। যুক্তিবিদ্যার এই ভিত্তিপ্রস্তরটি দাবি করে যে, যেকোনো যথেষ্ট জটিল আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে এমন কিছু সত্য সর্বদা বিদ্যমান থাকে যা সেই কাঠামোর নিজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে প্রমাণ করা অসম্ভব।
এই নীতি প্রয়োগ করে, বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে ভৌত বাস্তবতার সমস্ত দিক সম্পূর্ণ এবং স্ব-বিরোধীহীনভাবে বর্ণনা করার জন্য তথাকথিত “নন-অ্যালগরিদমিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং” প্রয়োজন। এর তাৎপর্য হলো, অস্তিত্বকে পুরোপুরি বর্ণনা করার জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন, তা কোনো প্রোগ্রাম বা সিমুলেশনের ভিত্তি—অর্থাৎ, লজিক্যাল গণনাগত পদক্ষেপের একটি ক্রম—এর মাধ্যমে অর্জন করা যায় না।
গবেষণার সহ-লেখক এবং সুপরিচিত কসমোলজিস্ট ডক্টর লরেন্স ক্রাউস এই সিদ্ধান্তের গভীর তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, যেকোনো সিমুলেশন তার প্রকৃতির দিক থেকে অ্যালগরিদমিক এবং পূর্বনির্ধারিত নিয়মের অধীন। যেহেতু বাস্তবতার মৌলিক কাঠামোর জন্য অ্যালগরিদমকে অতিক্রমকারী উপলব্ধির প্রয়োজন, তাই আমাদের মহাবিশ্ব কোনো প্রোগ্রামের আকারে কারো সৃষ্টি হতে পারে না। ফাইজাল এবং ক্রাউসের এই গবেষণা নিশ্চিত করে যে ভৌত বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে গণনাগত মডেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না, যা সুপারকম্পিউটারে মহাবিশ্বকে পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই ফলাফলগুলি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার জন্য, বিশেষত কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির ক্ষেত্রে, বিশাল গুরুত্ব বহন করে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান নিউটনীয় বস্তুর ধারণা থেকে সরে এসে আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দিকে ঝুঁকেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে স্থান এবং সময়ও মৌলিক নয়, বরং তথাকথিত প্লেটোনিক রাজত্বে বিদ্যমান গভীরতর তথ্য কাঠামো থেকে উদ্ভূত হয়। এই কারণে, শুধুমাত্র গণনার মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ “থিওরি অফ এভরিথিং” তৈরি করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য কেবল নির্দেশাবলী অনুসরণ করার চেয়েও বেশি কিছুর প্রয়োজন। এটি এমন এক উপলব্ধির পথ খুলে দেয় যেখানে অস্তিত্বের কিছু দিক যন্ত্রের জন্য সহজলভ্য পদ্ধতির বাইরে অন্য কোনো উপায়ে বোঝা যায়।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রতিটি পর্যবেক্ষক একটি বৃহত্তর প্রক্রিয়ার অংশ, যেখানে উপলব্ধি—গণনা নয়—জ্ঞান অর্জনের মূল চাবিকাঠি। এই গবেষণা সিমুলেশন হাইপোথিসিসকে দর্শন এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর ক্ষেত্র থেকে কঠোর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করেছে, যা এই তত্ত্বের একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক খণ্ডন প্রদান করে।
