স্পেনের জাধার (Jódar) অঞ্চলের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় ২৫০০ বছর পুরনো এক শীতকালীন অয়নান্ত উৎসবের অভয়ারণ্য আবিষ্কার করেছেন। এল ফন্টানার (El Fontanar) নামে পরিচিত এই স্থানটি মহাজাগতিক শক্তির উপাসনার কেন্দ্র ছিল বলে মনে করা হয় এবং এটি বিশেষভাবে শীতকালীন অয়নান্ত উৎসবের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই আবিষ্কারটি স্পেনের প্রাচীন আইবেরিয়ান সংস্কৃতির জ্যোতির্বিদ্যা ও ধর্মীয় রীতিনীতির উপর নতুন আলোকপাত করেছে।
এই অভয়ারণ্যের কেন্দ্রে রয়েছে এল ফন্টানার নামক একটি ৫ মিটারেরও বেশি উচ্চতার মনোলিথ বা একশিলা স্তম্ভ। শীতকালীন অয়নান্তের সময়, এই স্তম্ভের উপর সূর্যের আলো এমনভাবে পড়ে যে তার ছায়া একটি শিলা আশ্রয়স্থলের প্রবেশপথের নিচের অংশের সাথে মিলে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, এই বিন্যাসটি পুরুষ ও নারীর পবিত্র মিলনের প্রতীক, যা উর্বরতা ও পুনর্জন্মের এক পৌরাণিক আচারের অংশ ছিল। এই প্রতীকী মিলন প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রচলিত ছিল এবং এটি প্রকৃতির চক্রাকার আবর্তনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন। এই দুর্গটির উচ্চতা প্রায় ৬.৮-৭ মিটার, এবং V-আকৃতির প্রবেশপথটি ইচ্ছাকৃতভাবে সূর্যের আলোর সাথে মিথস্ক্রিয়া করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। মনোলিথের সামনে দুটি ছোট নলাকার পাথর রয়েছে এবং প্রবেশপথের উপরে একটি বিশাল পাথর রয়েছে, যা অতিরিক্ত ছায়া তৈরি করে, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী একটি সুনির্দিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে।
এই অভয়ারণ্যের নির্মাণকাল খ্রিস্টপূর্ব ৫ম বা ৪র্থ শতাব্দী বলে অনুমান করা হয়, যা এই অঞ্চলে বড় আকারের আইবেরিয়ান বসতি স্থাপনের পূর্ববর্তী সময়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ধর্মীয় অনুশীলনগুলিই সম্ভবত ভূমিকে আকার দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে শহুরে উন্নয়ন ঘটেছিল। এই আবিষ্কারটি এল জন্ডুলিলা উপত্যকার বিস্তৃত আচার-অনুষ্ঠানের ভূদৃশ্যের সাথে যুক্ত, যেখানে এল পাহারিও (El Pajarillo) নামক একটি কাঠামো রয়েছে, যা পাতাল জগতে নেমে আসা একজন নায়কের পৌরাণিক গল্পের সাথে সম্পর্কিত। এই সমস্ত স্থাপত্য একসাথে একটি পবিত্র ভূগোল গঠন করে, যেখানে পৌরাণিক কাহিনী, এলাকা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান একত্রিত হয়েছে।
গবেষকরা এই মনোলিথটিকে স্টোনহেঞ্জের মতো ঐতিহাসিক কাঠামোর সাথে তুলনা করেছেন, যা একই ধরনের জ্যোতির্বিদ্যা এবং ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে। এল ফন্টানারের মতো স্থানগুলি দেখায় যে প্রাচীন সভ্যতাগুলি কেবল তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনই করত না, বরং তারা মহাজাগতিক ঘটনাগুলির সাথে নিজেদের জীবনকে একীভূত করার চেষ্টা করত। এই অভয়ারণ্যটি সেই সময়ের মানুষের আধ্যাত্মিকতা, জ্যোতির্বিদ্যা জ্ঞান এবং প্রকৃতির প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধার এক অসাধারণ উদাহরণ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানবতা সর্বদা পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে, শরীর ও মহাজগতের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের পথ খুঁজেছে।