স্পেনের এল মিরাডর গুহায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় ৫,৭০০ বছর আগের নব্যপ্রস্তর যুগের নরমাংস ভোজনের (cannibalism) অকাট্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিষ্কারটি প্রাগৈতিহাসিক সমাজের উপর আমাদের ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। গুহাটিতে অন্তত ১১ জন ব্যক্তির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ই ছিল। এই দেহাবশেষগুলিতে কসাইয়ের চিহ্ন এবং খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের মানুষের জটিল ও হিংস্র আচরণকে নির্দেশ করে। প্রায় ৬০০টিরও বেশি হাড়ের খণ্ডে পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়াকরণের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে, যার মধ্যে ছিল মাংস ছাড়ানোর জন্য কাটা দাগ এবং মজ্জা বের করার চিহ্ন। কিছু হাড়ে মানুষের কামড়ের চিহ্নও পাওয়া গেছে, যা সরাসরি নরমাংস ভোজনের ইঙ্গিত দেয়।
রেডিওকার্বন ডেটিং অনুসারে, এই ঘটনাটি প্রায় ৫,৭০৯ থেকে ৫,৫৭৩ বছর আগের। গবেষকরা মনে করেন, এই নরমাংস ভোজন কোনো ধর্মীয় আচার বা কেবল বেঁচে থাকার তাগিদ থেকে ঘটেনি। বরং, এটি সম্ভবত একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার একটি হিংসাত্মক রূপ ছিল। স্ট্রোটিয়াম আইসোটোপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় আইবেরিয়ান উপদ্বীপের বাসিন্দা ছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এই ঘটনাটি বহিরাগতদের দ্বারা আক্রমণের চেয়ে বরং প্রতিবেশী গোষ্ঠীগুলির মধ্যেকার সংঘাতের ফল ছিল।
এল মিরাডর গুহায় প্রাপ্ত এই প্রমাণ ইউরোপে নব্যপ্রস্তর যুগের নরমাংস ভোজনের বিদ্যমান তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর আগে জার্মানির হারক্সহেইম এবং ফ্রান্সের ফন্টব্রেগোয়া-এর মতো ইউরোপীয় স্থানগুলিতেও একই ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এল মিরাডর গুহায় ব্রোঞ্জ যুগের নরমাংস ভোজনেরও প্রমাণ রয়েছে, যা এই স্থানটির দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাসকে তুলে ধরে। এই আবিষ্কারটি নব্যপ্রস্তর যুগের ইউরোপীয় সমাজগুলির উপর আলোকপাত করে। এটি সেই সময়ের আন্তঃগোষ্ঠী সহিংসতা, আঞ্চলিক বিরোধ এবং সম্পদ নিয়ে প্রতিযোগিতার মতো বিষয়গুলির উপর নতুন করে ভাবনার সুযোগ করে দেয়। এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনাগুলি সেই সময়ের সামাজিক কাঠামো এবং মানুষের বেঁচে থাকার কৌশলগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বলে মনে করা হয়। এল মিরাডর গুহার এই আবিষ্কার প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আচরণ এবং তাদের সামাজিক জীবনের জটিলতা বুঝতে সহায়ক।