প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি আন্তর্জাতিক দল দক্ষিণ চীন, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া জুড়ে ৫০টিরও বেশি সমাধিস্থল থেকে ৪,০০০ থেকে ১২,০০০ বছর পুরানো বিশ্বের প্রাচীনতম মমি আবিষ্কার করেছে। এই দেহাবশেষগুলি মিশরের মমি (প্রায় ৪,৫০০ বছর পুরানো) এবং চিলির চিনচোরো সংস্কৃতির মমি (প্রায় ৭,০০০ বছর পুরানো) থেকেও প্রাচীন।
অত্যন্ত কুঁকড়ানো এবং জয়েন্টগুলি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া দেহাবশেষগুলি একটি অনন্য সংরক্ষণ পদ্ধতির ইঙ্গিত দেয়। বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে দেহগুলিকে আগুন এবং ধোঁয়ার সংস্পর্শে আনা হয়েছিল, যা জয়েন্টগুলির ক্ষতি না করে শরীরকে ধীরে ধীরে শুকিয়ে ফেলার জন্য ধোঁয়া প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে করা হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক Hsiao-Chun Hung-এর মতে, এই আবিষ্কারটি কৌশল, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের এক অনন্য মিশ্রণ উন্মোচন করেছে।
এই ধোঁয়া-শুকনো মমিকরণ কৌশলটি সম্ভবত এশিয়ার আদিম শিকারী-সংগ্রাহক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল। গবেষকরা ধারণা করছেন যে এই প্রথার শিকড় প্রথম মানুষের আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসার সময়কালকে ছুঁতে পারে, যদিও প্রকৃত মমি-নির্মাণ প্রায় ১২,০০০ থেকে ৪,০০০ বছর পূর্বে ঘটেছে। এই প্রথা এশিয়ার শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচলিত ছিল এবং এশিয়া ও ওশেনিয়ার কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যবর্তী সম্ভাব্য সাংস্কৃতিক সংযোগের ইঙ্গিত দেয়। এটি সেই সময়ের মানুষের গভীর বিশ্বাস এবং প্রিয়জনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার একটি প্রতিফলন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পাপুয়া নিউ গিনির কিছু উপজাতি, যেমন ডানি এবং আঙ্গা, এখনও অনুরূপ মমিকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেখানে দেহগুলিকে দীর্ঘ সময় ধরে ধোঁয়া দিয়ে শুকানো হয়। আঙ্গা উপজাতি তিন মাস ধরে দেহ ধোঁয়া দিয়ে সংরক্ষণ করে এবং তারপর সেগুলিকে গ্রামের উপরে একটি পর্বতশৃঙ্গে স্থাপন করে। এই প্রথাটি তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে। এই আবিষ্কারটি প্রাগৈতিহাসিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুশীলন এবং এশিয়ার আদিম মানব জনগোষ্ঠী দ্বারা ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করেছে। এই গবেষণাটি প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, যা মানব ইতিহাস এবং সংস্কৃতির গভীরতর দিক উন্মোচন করে।