অস্ট্রিয়ার বুর্গেনল্যান্ড প্রদেশের রেখনিৎজ শহরের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বছরের পুরনো বিশাল বৃত্তাকার পরিখা এবং বসতির সন্ধান পেয়েছেন। এই 'ক্রাইসগ্রাবেনলাজেন' (Kreisgrabenanlagen) নামে পরিচিত কাঠামো গুলো প্রায় ৪৮৫০ থেকে ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্য নিওলিথিক যুগে নির্মিত হয়েছিল, যা স্টোনহেঞ্জ এবং মিশরের পিরামিডের চেয়েও প্রাচীন। রেখনিৎজের এই স্থানে চারটি বিশাল বৃত্তাকার পরিখা আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ক্রাইসগ্রাবেনলাজেন হিসেবে চিহ্নিত, এবং সেগুলোর প্রতিটির ব্যাস ১০০ মিটারের বেশি। ধারণা করা হয়, এই স্থানগুলো সামাজিক সমাবেশ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই আবিষ্কার নিওলিথিক জনগোষ্ঠীর উন্নত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার ইঙ্গিত দেয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে দুটি নিওলিথিক বসতিরও সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি বসতি প্রারম্ভিক নিওলিথিক যুগের, যা কৃষিভিত্তিক স্থায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তনের প্রমাণ বহন করে। অন্য বসতিটি মধ্য নিওলিথিক যুগের, যা ওই বৃত্তাকার পরিখাগুলোর সমসাময়িক। খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত গর্ত, খুঁটির চিহ্ন এবং মৃৎপাত্রের ভাঙা অংশগুলো সেই সময়ের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করছে। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি মধ্য নিওলিথিক যুগে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এখানে চারটি বিশাল বৃত্তাকার পরিখা আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ক্রাইসগ্রাবেনলাজেন হিসেবে চিহ্নিত এবং সেগুলো একে অপরের কাছাকাছি অবস্থিত।
গবেষকরা মনে করেন, এই বৃত্তাকার পরিখাগুলো প্রাচীন সৌর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারত। অনেক কাঠামোর প্রবেশদ্বার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ঋতুতে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মধ্য ইউরোপে, বিশেষ করে এলবে এবং দানিউব নদীর অববাহিকায়, ১২০টিরও বেশি অনুরূপ প্রাচীন বৃত্তাকার ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছে। রেখনিৎজের এই আবিষ্কার অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি থেকে জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অনুরূপ কাঠামোর একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের অংশ। এই বিশাল কাঠামো নির্মাণে যে বিপুল পরিমাণ শ্রম ও সমন্বয় প্রয়োজন হয়েছিল, তা থেকে বোঝা যায় যে এগুলো কেবল সাধারণ নির্মাণ ছিল না, বরং গভীর সামাজিক ও সম্ভবত ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করত।
খননকার্য ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো এই স্থানের তাৎপর্য আরও ভালোভাবে বোঝা এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার প্রস্তুতি নেওয়া। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনার্থী কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে পুনর্গঠিত নিদর্শন এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা প্রাগৈতিহাসিক যুগের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই আবিষ্কার নিওলিথিক জনগোষ্ঠীর স্থাপত্য ও সামাজিক অগ্রগতির উপর আলোকপাত করে। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত মাটির নমুনার বিশ্লেষণ হাজার হাজার বছর আগে এই অঞ্চলের কৃষি ল্যান্ডস্কেপের বিকাশকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।