প্রায় ১৪০ বছর পর, মিশিগান হ্রদের গভীরে এক কিংবদন্তী "ভূতুড়ে জাহাজ" এফ. জে. কিং-এর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কারটি উইসকনসিন ঐতিহাসিক সোসাইটি এবং উইসকনসিন আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজি অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা দশকের পর দশক ধরে এই ঐতিহাসিক মালবাহী জাহাজের সন্ধানকারী গবেষকদের জন্য একটি বড় সাফল্য।
এফ. জে. কিং জাহাজটি ১৮৬৭ সালে ওহাইওর টোলেডোতে নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি তিন-মাস্তুল বিশিষ্ট মালবাহী জাহাজ ছিল, যা ৪৪ মিটার লম্বা এবং প্রধানত লোহা পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হত। ১৮৮৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, মিশিগান হ্রদে একটি ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। ক্যাপ্টেন উইলিয়াম গ্রিফিন এবং তার ক্রুরা জাহাজটি ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন যখন ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষটি ২৮ জুন, ২০২৫ তারিখে উইসকনসিনের ডোর পেনিনসুলার বেইলি'স হারবারের কাছে আবিষ্কার করা হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর, গবেষক ব্র্যান্ডন বেইলিওডের নেতৃত্বে একটি দল অত্যাধুনিক সাইড-স্ক্যান সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাহাজটিকে খুঁজে বের করে। এটি এমন এক স্থানে পাওয়া গেছে যা ঐতিহাসিক বাতিঘরের রক্ষকের দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি, যা পূর্বে অনেক অনুসন্ধানের পরেও অধরা ছিল।
এই আবিষ্কারটি জলজ প্রত্নতত্ত্বের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রেট লেকসে আবিষ্কৃত জাহাজের মধ্যে এফ. জে. কিং অন্যতম। তবে, এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি আক্রমণাত্মক জলজ প্রজাতির কারণে হুমকির সম্মুখীন। জেব্রা এবং কোয়াগা মাসেলের মতো প্রজাতিগুলি জাহাজের ধাতব কাঠামোতে লেগে সেগুলিকে ক্ষয় করছে, যা এই প্রাচীন নিদর্শনগুলির দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রজাতির দ্রুত বিস্তার এবং জাহাজের কাঠামোর সাথে তাদের দৃঢ়ভাবে লেগে থাকার ক্ষমতা প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই আবিষ্কারটি কেবল একটি হারানো জাহাজের রহস্যই উন্মোচন করেনি, বরং উনিশ শতকের জাহাজ নির্মাণ এবং গ্রেট লেকসের নৌপরিবহন ইতিহাস সম্পর্কেও মূল্যবান তথ্য প্রদান করেছে। ঠান্ডা জলের নিচে থাকা এই জাহাজটি গবেষকদের অতীতের এক ঝলক দেখার সুযোগ করে দিয়েছে, যা এই অঞ্চলের সামুদ্রিক ইতিহাসের প্রতি আমাদের বোঝাপড়াকে আরও গভীর করবে।