একটি 12 000 বছর পুরোনো মূর্তি যা মানুষের সাথে একটি হংসের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া দেখায়। (ছবি: Лоран Давин; CC BY-NC-ND 4.0)
ইসরায়েলে আবিষ্কৃত ১২,০০০ বছরের পুরোনো মাটির মূর্তি: লেভান্টের আদি শিল্পকলার নতুন ব্যাখ্যা
সম্পাদনা করেছেন: Ирина iryna_blgka blgka
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সমাজে এক বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে, যা দেশের উত্তরাঞ্চলে ঘটেছে। লরেন্ট ডেভিন (Laurent Davin) এবং লিওরে গ্রসম্যানের (Leore Grosman) নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল ১২,০০০ বছর পুরোনো একটি মাটির মূর্তি খুঁজে পেয়েছেন। এই প্রাচীন শিল্পকর্মটি প্রাক-নব্যপ্রস্তর যুগ বা আদি এপি-প্যালিওলিথিক সময়ের, বিশেষত নাতুফিয়ান (Natufian) সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেমের (Hebrew University in Jerusalem) প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন যে এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারটি প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (Proceedings of the National Academy of Sciences - PNAS) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মূর্তিটি আবিষ্কারের পর ডেভিন তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেন, “আমি প্রথমে মানব আকৃতিটি চিনতে পারি, এবং তারপর তার পিঠের উপর শুয়ে থাকা পাখিটিকে।” এই আবিষ্কার মধ্যপ্রাচ্যের আদিম শিল্পকলা এবং প্রতীকী চিন্তাভাবনার ইতিহাসকে নতুন করে বুঝতে সাহায্য করছে।
এই অনন্য মূর্তিটিতে একজন নারী এবং একটি পাখির (সম্ভবত রাজহাঁস বা হাঁস) মধ্যেকার মিথস্ক্রিয়া চিত্রিত হয়েছে। এটি আদিম শিকারি-সংগ্রাহক সম্প্রদায়ের প্রতীকী বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির এক বিরল প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন যে চিত্রিত মিলনটি আক্ষরিক অর্থে শারীরিক মিলন নাও হতে পারে, বরং এটি পৌরাণিক বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে। গ্রসম্যান এই প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করেন, “আমরা এই দৃশ্যটিকে একটি প্রাণী আত্মার (animal spirit) সাথে মানুষের কাল্পনিক মিলন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছি—এমন ধারণা অ্যানিমিজম (animistic) সমাজে একটি প্রচলিত বিষয়।” এই ব্যাখ্যা নাতুফিয়ানদের গভীর আধ্যাত্মিক এবং প্রতীকী জীবনযাত্রার দিকে ইঙ্গিত করে।
ক্ষুদ্রাকৃতির এই শিল্পবস্তুটির উচ্চতা মাত্র ৩.৭ সেমি। এটি স্থানীয় মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং প্রায় ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়েছিল, যা সেই সময়েই পাইরোটেকনোলজির (pyrotechnology) প্রাথমিক ব্যবহারের প্রমাণ দেয়। আণুবীক্ষণিক পরীক্ষায় মূর্তির পৃষ্ঠে লাল রঞ্জক (গেরুয়া বা ochre) এর চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া, একটি আঙুলের ছাপও শনাক্ত করা হয়েছে, যা সম্ভবত একজন তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক বা নারী কারিগরের ছিল, যিনি এটি তৈরি করেছিলেন।
এই আবিষ্কারের প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য অপরিসীম। এটি মানব ও প্রাণীর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া স্পষ্টভাবে প্রদর্শনকারী আলঙ্কারিক শিল্পের (figurative art) প্রাচীনতম পরিচিত উদাহরণগুলির মধ্যে অন্যতম। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে আবিষ্কৃত নারীর সবচেয়ে প্রাচীন বাস্তবসম্মত (naturalistic) চিত্রণ। মূর্তিটি একটি অর্ধবৃত্তাকার কাঠামোর অভ্যন্তরে পাওয়া গিয়েছিল, যা সমাধি এবং আচার-অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই স্থানিক সংযোগ নাতুফিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে এর গভীর প্রতীকী এবং ধর্মীয় ভূমিকা তুলে ধরে, যা তাদের সাংস্কৃতিক জটিলতা এবং শিল্পকলার উন্নত স্তরের দিকে আলোকপাত করে।
উৎসসমূহ
Българска Телеграфна Агенция
Момченце в Израел откри статуетка на 3400 г.
Откриха две гробници с десетки скелети на 2500 години в Израел
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
