গ্যাবনের গভীর জঙ্গলে অবস্থিত Youmbidi গুহাটি ১২,০০০ বছর ধরে মানব বসতির এক অবিচ্ছিন্ন ধারা বহন করছে, যা মধ্য আফ্রিকার প্রাগৈতিহাসিক যুগের উপর এক গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করে। ফরাসি জিওআর্কিওলজিস্ট রিচার্ড ওসলিসলির নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক দল এই গুহাটি খনন করছে। এই খননকার্যের ফলে ১০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পাথরের সরঞ্জাম এবং এই অঞ্চলের প্রাচীনতম বলে বিবেচিত ৬,৫০০ বছরের পুরনো মৃৎপাত্রের একটি অংশ আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়াও, একটি সূক্ষ্ম শামুক-খোলকের পুঁতি পাওয়া গেছে, যা প্রাচীন মানুষের শৈল্পিক প্রয়াস ও সংস্কৃতির ইঙ্গিত দেয়। মানুষের মতো দেখতে দাঁতের সন্ধানও মিলেছে, যা প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দিতে পারে।
এই আবিষ্কারগুলি বনভূমিতে বসবাসকারী স্থির জনগোষ্ঠীর প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। এটি প্রমাণ করে যে আদিম মানুষ তাদের পরিবেশের সাথে এক জটিল সম্পর্ক বজায় রাখত। Youmbidi গুহার গবেষণা অতীতের সমাজগুলির পুনর্গঠনে সহায়ক হবে এবং বর্তমান পরিবেশগত সমস্যাগুলির সমাধানেও মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করবে বলে গবেষকরা আশা করছেন। মধ্য আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় গ্যাবনের মতো বনভূমি অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সুযোগ কম, কিন্তু রিচার্ড ওসলিসলির মতো গবেষকরা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। ওসলিসলি, যিনি মধ্য আফ্রিকায় ৪৫ বছর ধরে কাজ করছেন, তিনি বলেন, "আমাকে বলা হয়েছিল যে জঙ্গলে কিছুই নেই, কিন্তু আমি সেখানে কী ঘটছে তা খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি।" তিনি আরও বলেন, "আমরা বুঝতে পারছি যে এই বনগুলিতে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে একটি খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে মানুষ খুব দীর্ঘ সময় ধরে বাস করেছে।" এই গুহা থেকে প্রাপ্ত মৃৎপাত্রের অংশটি মধ্য আফ্রিকায় প্রাপ্ত প্রাচীনতম মৃৎপাত্রের মধ্যে অন্যতম। শামুকের খোলক থেকে তৈরি পুঁতিটি প্রায় ৩,৩০০ থেকে ৪,৯০০ বছর পুরনো বলে অনুমান করা হয়, যা সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির এক অমূল্য নিদর্শন। এই ধরনের পুঁতিগুলি প্রায়শই পরিচয় প্রকাশ, সামাজিক বন্ধন এবং প্রতীকী আচরণের প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হয়। এই আবিষ্কারগুলি মধ্য আফ্রিকার প্রাগৈতিহাসিক মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করে। গবেষকরা আশা করছেন যে Youmbidi গুহার আরও গভীর খনন মধ্য আফ্রিকার মানব বসতির ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে মূল্যবান শিক্ষা দেবে।