দক্ষিণ বুলগেরিয়ার কাপিতান পেতকো ভইভোদা গ্রামের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর একটি থ্রেসিয়ান যোদ্ধার সমাধি আবিষ্কার করেছেন। এটি দেশটির সবচেয়ে সমৃদ্ধ হেলেনিস্টিক যুগের সমাধি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আবিষ্কারটি থ্রেসিয়ান সংস্কৃতির গভীরতা উন্মোচনের পাশাপাশি স্থানীয় ঐতিহ্য ও রোমান প্রভাবের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। সমাধিটি একজন উচ্চপদস্থ থ্রেসিয়ান যোদ্ধা বা শাসকের বলে মনে করা হচ্ছে, যিনি তাঁর যুদ্ধ-অশ্ব এবং মূল্যবান প্রত্নবস্তু সহ সমাহিত হয়েছিলেন।
প্রায় ৩x৩ মিটার আকারের এবং এক মিটার গভীর এই সমাধিটি থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে একটি রূপা-খচিত মুকুট, একটি রূপার ব্রেসলেট, একটি আংটি, একটি কারুকার্যময় ফিবুলা এবং রত্নখচিত হাতলযুক্ত একটি গ্রিক মখাইরা তলোয়ার। তলোয়ারটির হাতলে খচিত রত্নপাথর এবং সোনার কাজ সেই সময়ের উন্নত কারুশিল্পের পরিচয় বহন করে। যোদ্ধার যুদ্ধ-অশ্বটিও বিশেষভাবে সজ্জিত ছিল, যার সাজসজ্জায় স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জের পদক ব্যবহার করা হয়েছিল, যেগুলিতে পৌরাণিক দৃশ্যাবলী খোদাই করা ছিল, যেমন হারকিউলিস এবং দৈত্য অ্যান্টিয়াসের মধ্যেকার লড়াই। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, এই মুকুটটি সম্ভবত বিশেষ ধর্মীয় বা আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি যোদ্ধার মর্যাদার প্রতীক ছিল।
এই আবিষ্কারটি এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ গত বছরও প্রায় ৬০ মিটার দূরে একই রকম একটি সমৃদ্ধ সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেই সমাধিতেও বিরল স্বর্ণের সামগ্রী এবং সজ্জিত একটি ঘোড়া পাওয়া গিয়েছিল, যা রোমান সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্কিত একজন থ্রেসিয়ান অভিজাতের বলে মনে করা হয়। দুটি সমাধির নৈকট্য ইঙ্গিত দেয় যে এই স্থানটি সম্ভবত হেলেনিস্টিক যুগের থ্রেসিয়ান অভিজাতদের একটি পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত সমাধিস্থল ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্লাদিমির স্টাইকভ, ডিয়ান ডাইচেভ এবং ডঃ ড্যানিয়েলা অ্যাগ্রের নেতৃত্বে বুলগেরিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের একটি দল এই খননকার্য পরিচালনা করেছে। তারা মনে করেন, এই যোদ্ধা আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ছিলেন। উদ্ধারকৃত সামগ্রীগুলির গুণমান এবং কারুকার্য দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এগুলি পারগামন বা আলেকজান্দ্রিয়ার মতো উন্নত কর্মশালা থেকে আনা হয়েছিল, যা থ্রেসিয়ানদের বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেয়। এই অমূল্য প্রত্নবস্তুগুলি বর্তমানে পুলিশি তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে টোপোলভগ্রাডের ইতিহাস জাদুঘরে একটি বিশেষ কক্ষে প্রদর্শিত হবে। এই আবিষ্কারগুলি থ্রেসিয়ান সংস্কৃতির উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি রোমান সাম্রাজ্যের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া এবং সাংস্কৃতিক আত্তীকরণের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা আগামী বছরগুলিতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় হয়ে থাকবে।