নিউ ইয়র্কের একজন বিচারক রেক্স হিউয়ারম্যানের আসন্ন বিচারের জন্য হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং (Whole Genome Sequencing) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত উন্নত ডিএনএ প্রমাণ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। ফরেনসিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, কারণ নিউ ইয়র্কের কোনো আদালতে এই ধরনের অত্যাধুনিক ডিএনএ কৌশল এই প্রথম প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে চলেছে।
রেক্স হিউয়ারম্যান, একজন ৬১ বছর বয়সী স্থপতি, ১৯৭০-এর দশক থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গিলগো বিচের আশেপাশে আবিষ্কৃত সাতজন মহিলার হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। এই মামলায় শনাক্ত হওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন মেলিসা বার্থেলেমি, মেগান ওয়াটারম্যান, অ্যাম্বার কস্টেলো, মরিন ব্রেইনার্ড-বার্নেস, জেসিকা টেলর, সান্ড্রা কস্টিলা এবং ভ্যালেরি ম্যাক। মামলার প্রসিকিউশন মূলত ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক ল্যাবরেটরি অ্যাস্ট্রিয়া ফরেনসিকস (Astrea Forensics) দ্বারা বিশ্লেষণ করা ডিএনএ প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। এই ল্যাবটি বিশেষভাবে পুরোনো এবং ক্ষতিগ্রস্ত নমুনা থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য পরিচিত। হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং পদ্ধতিতে ডিএনএ-র লক্ষাধিক বিন্দুর তুলনা করা হয়, যা প্রায় নিশ্চিত শনাক্তকরণের লক্ষ্যে কাজ করে। এটি প্রচলিত ডিএনএ পরীক্ষার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য সরবরাহ করে, যেখানে সাধারণত ২৪ থেকে ২৭টি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিশ্লেষণ করা হয়। এই উন্নত কৌশলটি এমন নমুনা থেকেও ডিএনএ নিষ্কাশন করতে সক্ষম যা অত্যন্ত পুরোনো বা ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি শিকড়বিহীন চুল থেকেও।
তবে, হিউয়ারম্যানের প্রতিরক্ষা দল এই প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের যুক্তি ছিল যে এই পদ্ধতি নিউ ইয়র্কের ফৌজদারি আদালতে পূর্বে পরীক্ষিত বা গৃহীত হয়নি। এছাড়াও, তারা দাবি করেন যে ডিএনএ বিশ্লেষণ নিউ ইয়র্কের জনস্বাস্থ্য আইন লঙ্ঘন করে, যা লাভজনক ল্যাবগুলিকে ফৌজদারি মামলায় প্রমাণ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। এই আপত্তি সত্ত্বেও, বিচারক টিমোথি মাজ্জেই রায় দেন যে অ্যাস্ট্রিয়া ফরেনসিকস থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ প্রমাণ হিউয়ারম্যানের বিচারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বিচারক মনে করেন যে প্রতিরক্ষা পক্ষ প্রসিকিউশনের বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে ভুল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সাফোক কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রে টিয়ার্নি এই সিদ্ধান্তকে ফরেনসিক বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই রায়টি নিউ ইয়র্কের বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, বিশেষ করে পুরোনো বা ক্ষতিগ্রস্ত নমুনার ক্ষেত্রে। এই ধরনের উন্নত ডিএনএ কৌশল অতীতে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন নিয়ান্ডারথাল জিনোম ম্যাপিং, যা ২০২২ সালে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিল। এই মামলার রায় ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিকে আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহারের পথ খুলে দিতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত থাকা মামলাগুলির ক্ষেত্রে।
মামলার শুনানির জন্য একটি নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। হিউয়ারম্যান অবশ্য নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।