ডিজিটাল তথ্যের ক্রমবর্ধমান বিস্ফোরণের মুখে, প্রচলিত ডেটা স্টোরেজ পদ্ধতিগুলি তাদের ধারণক্ষমতা এবং স্থায়িত্বের সীমার সম্মুখীন হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, বিজ্ঞানীরা ডিএনএ-কে ডেটা সংরক্ষণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। চীনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছেন, যেখানে তারা একটি "ডিএনএ টেপ" তৈরি করেছেন যা পেটাবাইট-স্কেল ডেটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম। এই উদ্ভাবনটি *Science Advances* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি আমাদের ডিজিটাল তথ্যের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এই অত্যাধুনিক ডিএনএ টেপ প্রযুক্তি ডিজিটাল ফাইলগুলিকে ডিএনএ-র চারটি মৌলিক উপাদান - অ্যাডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C), এবং থাইমিন (T)-এর অনুক্রমে রূপান্তরিত করে। এই অনুক্রমগুলি পরবর্তীতে একটি পলিয়েস্টার এবং নাইলন মিশ্রণের টেপের উপর স্থাপন করা হয়, যা একটি স্ফটিকাকার স্তর দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। প্রতিটি টেপ একটি ক্ষুদ্র লাইব্রেরির মতো কাজ করে, যেখানে লক্ষ লক্ষ খণ্ড ডিজিটাল ফোল্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে পুরো ডেটা স্ক্যান না করেই নির্দিষ্ট ফাইলে দ্রুত প্রবেশাধিকার সম্ভব হয়। একটি ১০০-মিটার ডিএনএ টেপ প্রায় ৩৬ পেটাবাইট ডেটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম বলে অনুমান করা হয়, যা বর্তমানের সবচেয়ে উন্নত হার্ড ড্রাইভের ধারণক্ষমতাকে বহুলাংশে ছাড়িয়ে যায় এবং বিলিয়ন বিলিয়ন গান সংরক্ষণ করতে পারে।
ডিএনএ স্টোরেজের একটি প্রধান সুবিধা হলো এর অসাধারণ স্থায়িত্ব। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলির বিপরীতে যেগুলির জন্য অবিরাম বিদ্যুৎ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন, ডিএনএ বিদ্যুৎ ছাড়াই হাজার হাজার বছর ধরে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। এটি ডেটা সেন্টারগুলির বিদ্যুৎ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে এবং শীতলীকরণ ও বিশেষ হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভরতা কমায়। এছাড়াও, ডিএনএ আর্দ্রতা এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের মতো কারণগুলির প্রতি প্রতিরোধী, যা সংরক্ষিত তথ্যের অখণ্ডতা নিশ্চিত করে। এই স্থায়িত্ব এটিকে দীর্ঘমেয়াদী আর্কাইভের জন্য একটি আদর্শ মাধ্যম করে তুলেছে। এর মাধ্যমে জাতীয় আর্কাইভগুলি তাদের সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইতিহাস একটি ছোট জায়গায় সংরক্ষণ করতে পারবে অথবা গবেষণা কেন্দ্রগুলি শত শত বছর ধরে জেনেটিক সিকোয়েন্স সংরক্ষণ করতে পারবে।
যদিও এর সম্ভাবনা অপরিসীম, এই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং পড়ার খরচ এখনও বেশি, তবে জৈবপ্রযুক্তিগত কৌশলের উন্নতির সাথে সাথে এই মূল্য হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও, ডিএনএ-র পঠন এবং লিখন গতি বর্তমানে প্রচলিত স্টোরেজ পদ্ধতির তুলনায় ধীর, যা এটিকে তাৎক্ষণিক ডেটা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তাযুক্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলির পরিবর্তে আর্কাইভাল সিস্টেমের জন্য বেশি উপযোগী করে তোলে। বিভিন্ন নির্মাতা এবং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে মানসম্মতকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা যা বৃহৎ পরিসরে কার্যকারিতার জন্য অতিক্রম করতে হবে।
চীনের এই উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ। মাইক্রোসফ্ট এবং ইলুমিনার মতো সংস্থাগুলিও জৈবিক স্টোরেজ সমাধান নিয়ে গবেষণা করছে। ব্রাজিলে, IPT এবং Lenovo প্রমিথিউস প্রকল্পের মাধ্যমে ডিএনএ স্টোরেজ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এর সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশনগুলি বিশাল, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে মহাকাশযান এবং স্যাটেলাইটগুলির জন্য শক্তিশালী ডেটা স্টোরেজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে ওজন, শক্তি এবং স্থায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিএনএ স্ট্র্যান্ড থেকে ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের এই পরীক্ষামূলক ক্ষমতা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর বাইরে থাকা সম্ভাবনাগুলিকে উন্মোচিত করছে, যা ডিজিটাল ডেটা ব্যবস্থাপনার আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলির জন্য একটি টেকসই, উচ্চ-ঘনত্বের সমাধান প্রদান করছে।