স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল (CSIC) এবং মিগুয়েল হার্নান্দেজ ইউনিভার্সিটি অফ এলচে (UMH)-এর একটি যৌথ কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসের গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা এমন একটি প্রক্রিয়া শনাক্ত করেছেন যা নিউরনের নিজস্ব পরিচয় রক্ষা করে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে KDM1A এবং KDM5C নামক দুটি এনজাইম একসাথে কাজ করে 'এপিজেনেটিক প্রহরী' হিসেবে। এই এনজাইমগুলির প্রধান কাজ হলো নিউরনের জন্য অপ্রয়োজনীয় জিনগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা, যাতে শুধুমাত্র সঠিক জিনগুলি সক্রিয় থাকে।
সেল রিপোর্টস (Cell Reports) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের নিউরনে এই দুটি এনজাইমের জিন অপসারণ করা ইঁদুর মডেল ব্যবহার করে করা হয়েছে। এর ফলে গবেষকরা দেখতে পান যে, নিউরনের বিকাশের পর্যায় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এপিজেনেটিক নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়ে। দেখা গেছে, এই দুটি এনজাইমের সম্মিলিত প্রভাব তাদের পৃথক প্রভাবের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন উভয় এনজাইম কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন নিউরনগুলি ভুল জিন প্রকাশ করতে শুরু করে, যা স্মৃতি, শেখা এবং উদ্বেগের মতো বিষয়গুলিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
গবেষকরা একটি বহু-বিষয়ক পদ্ধতির মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, দুটি এনজাইমের অনুপস্থিতি নিউরনের এপিজেনেটিক পরিবেশকে গভীরভাবে পরিবর্তন করে। অনেক জিনোমিক অঞ্চলে এমন এপিজেনেটিক পরিবর্তন জমা হয় যা সক্রিয় জিনের সঙ্গে যুক্ত, অথচ সেই অঞ্চলগুলি নিষ্ক্রিয় থাকার কথা। এছাড়াও, নিউরনের জিনোমের ত্রিমাত্রিক গঠনেও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই পরিবর্তনগুলির ফলে নিউরনের কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসে, যেমন তাদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা ইঁদুরগুলির আচরণ এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
এই গবেষণাটি এপিজেনেটিক নিয়ন্ত্রকদের মিউটেশনের কারণে সৃষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা সম্পর্কিত স্নায়বিক ব্যাধিগুলির উৎস বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই এনজাইমগুলির মিথস্ক্রিয়া বোঝা নিউরনের জীববিজ্ঞান এবং স্নায়বিক রোগগুলির সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলি সনাক্ত করতে সহায়ক। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলিতেও এই একই গবেষণাগার থেকে KDM1A-এর গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছিল, যা জিনোমের ত্রিমাত্রিক কাঠামো বজায় রাখতে এবং বার্ধক্যজনিত ক্ষয় রোধ করতে অপরিহার্য। অন্যদিকে, KDM5C ভুল ট্রান্সক্রিপশন প্রতিরোধ এবং নিউরনের প্রতিক্রিয়া উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয়। এই দুই প্রোটিনের সম্মিলিত কার্যকারিতা নিউরনের পরিচয় সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
মানুষের মধ্যে KDM1A এবং KDM5C জিনের মিউটেশন বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা এবং অন্যান্য স্নায়বিক ব্যাধির সাথে যুক্ত। এই গবেষণাটি মস্তিষ্কের কিছু রোগের উৎস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও গভীর করার জন্য নতুন গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এপিজেনেটিক পরিবর্তনগুলি স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এদের সঠিক কার্যকারিতা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও জ্ঞানীয় ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। পরিবেশগত কারণগুলি, যেমন পুষ্টি এবং জীবনধারা, এপিজেনেটিক পরিবর্তনগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, যা স্নায়বিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।