৩৯,০০০ বছরের পুরোনো ইউকা ম্যামথের দেহ থেকে নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত প্রাচীনতম আরএনএ আবিষ্কার!
সম্পাদনা করেছেন: Katia Cherviakova
প্যালিওবায়োলজির ক্ষেত্রে একদল গবেষক একটি যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁরা সফলভাবে পৃথিবীর ইতিহাসে এ যাবৎকালের মধ্যে আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন আরএনএ অণুকে পৃথক করে তার সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি পাওয়া গেছে 'ইউকা' নামের একটি কিশোর লোমশ ম্যামথের দেহাবশেষ থেকে, যা ৩৯,০০০ বছর ধরে সাইবেরিয়ার চিরস্থায়ী বরফের (পারমাফ্রস্ট) নিচে সংরক্ষিত ছিল। ১৪ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে 'সেল' জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল বিজ্ঞান মহলে প্রচলিত সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে যে, জীবের মৃত্যুর পর আরএনএ দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এটি দেখিয়েছে যে নির্দিষ্ট অনুকূল পরিস্থিতিতে আরএনএ কয়েক হাজার বছর ধরেও টিকে থাকতে পারে।
অসাধারণভাবে সংরক্ষিত ইউকার দেহাবশেষ, যা একটি পুরুষ ম্যামথ ছিল, ২০১০ সালে ল্যাপটেভ সাগরের কাছে ওয়োগোস ইয়ার উপকূলে আবিষ্কৃত হয়। এটি ছিল একটি অত্যন্ত বিরল আবিষ্কার। আণবিক উপাদানটি তার বাম সামনের অঙ্গের পেশী কলা থেকে নিষ্কাশন করা হয়েছিল, যা বিজ্ঞানীদের প্রাণীটির মৃত্যুর মুহূর্তে জিন প্রকাশের ধরণ (gene expression patterns) সম্পর্কে সরাসরি তথ্য পেতে সাহায্য করেছে। আরএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওয়াই-ক্রোমোজোমের খণ্ডাংশ পাওয়া যায়, যা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে ইউকা পুরুষ ছিল – যদিও পূর্বে তাকে ভুলবশত স্ত্রী ম্যামথ বলে মনে করা হতো।
বহু-উপাদানভিত্তিক এই গভীর গবেষণায় কোষীয় প্রকাশে তীব্র চাপ (stress) এবং প্রদাহের (inflammation) চিহ্নগুলি উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে প্রাণীটি চরমভাবে দুর্বল ছিল এবং তার পায়ের পেশীগুলি অতিরিক্ত ভারাক্রান্ত ছিল, যা সম্ভবত দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বিপদ থেকে বাঁচতে দ্রুত দৌড়ানোর ফল। এই তথ্যগুলি পূর্ববর্তী রূপগত বৈশিষ্ট্যের (morphological features) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি ধারণাকে জোরালোভাবে সমর্থন করে: ইউকা ৬ থেকে ৮ বছর বয়সে মারা গিয়েছিল, এবং সম্ভবত মৃত্যুর ঠিক অল্প সময় আগে একটি গুহা সিংহের আক্রমণের শিকার হয়েছিল।
গবেষণায় শুধু প্রোটিন-কোডিং ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) নয়, বরং জিন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণকারী মাইক্রোআরএনএ (microRNA) সহ নন-কোডিং অণুগুলিও শনাক্ত করা হয়েছে। ইউকার দেহাবশেষ চিরস্থায়ী বরফের প্রাকৃতিক 'রেফ্রিজারেটর'-এ সংরক্ষিত থাকার কারণেই এই জটিল কাজটি সফল হয়েছে। এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, হাজার হাজার বছর ধরে বরফের নিচে থাকা স্তন্যপায়ী প্রাণীর নরম কলা থেকেও জৈব-রাসায়নিক ছাপ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, যা আগে অসম্ভব বলে মনে করা হতো।
এই ধরনের গবেষণা ডিএনএ এবং প্রোটিন বিশ্লেষণের বাইরে প্যালিওবায়োলজির সরঞ্জামকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করে। এটি প্রাচীন আরএনএ কাঠামো অধ্যয়নের সুযোগ খুলে দেয়। ডিএনএ মূলত বংশগতির তথ্য সংরক্ষণ করে, কিন্তু আরএনএ ঠিক তার বিপরীতে কাজ করে—এটি জীবনকালে ঘটে যাওয়া প্রকৃত জৈবিক প্রক্রিয়াগুলির প্রতিধ্বনিকে ধারণ করে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন মৃত্যুর মুহূর্তের আগে প্রাণীটির শরীরে ঠিক কী ঘটছিল। চিরস্থায়ী বরফের নিচে সংরক্ষিত এই নরম কলা থেকে প্রাপ্ত জৈব-রাসায়নিক ছাপগুলি প্রাচীন জীবনের রহস্য উন্মোচনে এবং বিলুপ্ত প্রাণীদের শারীরবৃত্তীয় অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল।
উৎসসমূহ
Science News
Reuters
National Geographic
The Washington Post
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
